- বাংলাদেশ
- আ'লীগ প্রকাশ্যে আচরণবিধি ভাঙছে: ইসিকে বিএনপি প্রতিনিধি দল
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পর্যবেক্ষক সংস্থা নিয়ে অভিযোগ
আ'লীগ প্রকাশ্যে আচরণবিধি ভাঙছে: ইসিকে বিএনপি প্রতিনিধি দল

ফাইল ছবি
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রচার চালাচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে বিএনপি। তারা বলছে, ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে সক্রিয় নন। এছাড়া ১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থা সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট। এসব সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।
সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধি দল এসব অভিযোগ করে। পরে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। বেলা ৩টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে। এক ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, এমন কোনো আচরণবিধি নেই, যা সরকার পক্ষ ভঙ্গ করছে না। নির্বাচনে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সংশ্নিষ্টতা একেবারেই পরিস্কার। এর জন্য সাক্ষ্য-প্রমাণের দরকার নেই। ফুটপাতের ওপর অন্তত একশ' নির্বাচনী অফিস করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এসব অফিসে লোকজন চেয়ার নিয়ে বসে আছেন, মাইক বাজছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত সঙ্গে সঙ্গে এগুলো ভেঙে দেওয়া। এরপরও অফিস তৈরি করলে তাদের শোকজ করা এবং আবার অফিস বানালে প্রার্থিতা বাতিল করা। এটাই আইন। কিন্তু তারা কোনো আইন মানছে না। কেউ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ঢাকা শহর নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় ছবিতে ভরে গেছে। ওভার সাইজের ব্যানারে ভরে গেছে। সব সরকারি দলের। বিএনপি প্রার্থীদের ওভার সাইজ পোস্টার নেই। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায় হচ্ছে? একটি দল কিছুই মানছে না।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি আচরণবিধি মানছে। রাস্তা ও ফুটপাতের ওপর বিএনপি প্রার্থীরা একটিও অফিস তৈরি করেননি। তারা পুরোপুরি আচরণবিধি মেনে চলছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনো মোবাইল কোর্ট মাঠে নেই। বিএনপি প্রার্থীদের যে মারধর করা হচ্ছে তাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমরা প্রথম থেকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা চেয়ে আসছি। তিনি আরও বলেন, প্রার্থীদের গায়ের ওপর হাত তোলা হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে- সেখানে কোনো মামলা হচ্ছে না, সমাধান হচ্ছে না। ম্যাজিস্ট্রেটরা অফিসে বসে কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে মাঠের সম্পর্ক নেই। ফুটপাতের ওপর তৈরি অফিসগুলো ভেঙে দেওয়ার কথা, ওভারসাইজ পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া, মারধরের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা- কোনোটিই করা হচ্ছে না।
আমীর খসরু বলেন, 'আমরা এসব বিষয় নির্বাচন কমিশনকে বলেছি। উনারা ওয়াদা করেছেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফুটপাতের ওপর তৈরি অফিস ভেঙে দেবেন, ওভারসাইজ পোস্টার নামিয়ে ফেলবেন, মাইকিং ইত্যাদি আইনের বিরুদ্ধে যেসব কাজ চলছে তা বন্ধ করবেন।'
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির এ নেতা বলেন, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থার মালিক আরেকটি সংগঠনের প্রধান নির্বাহী। দুটোই পর্যবেক্ষকের তালিকায় রয়েছে। দুটির পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগের সদস্যরা। ২২টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ১৮টির কোনো ওয়েবসাইট নেই। এদের অধিকাংশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এদের জনবল নেই। বেশিরভাগ দলীয় লোকদের পর্যবেক্ষক করবে। তারা নির্বাচনের দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বলতে থাকবেন নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। এর বাইরে তাদের বলার কোনো সুযোগ নেই। ইভিএম যে ভোটের সংখ্যা দেবে, এ পর্যবেক্ষকরা তাকে স্বাগত জানাবেন। তিনি বলেন, ব্রতী, ডেমক্রেসিওয়াচ, ফেমার মতো প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যুগে যুগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে তাদের নাম নেই। যারা সন্ধ্যায় বলবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে তাদের নাম এ তালিকায় রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের ওপর বিএনপি নেতাকর্মী হামলা করেছে বলে সরকারি দলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে যে পরিবেশ, দখলদারিত্ব, খবরদারির রাজনীতি চলছে সেই পরিস্থিতিতে বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করেছে তা মানুষ বিশ্বাস করবে? বিশ্বাস করার কোনো কারণ আছে? এখন আপনাকে মারবে আবার আপনার বিরুদ্ধে মামলা করবে- রাজনীতির নতুন এই নিয়ম শুরু হয়েছে।
বিএনপি প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন