
সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতে নতুন করে প্রায় সাড়ে চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য খাতের জন্য এটি বড় সুখবর। এটি গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির একটি অংশ। এই চিকিৎসক ও নার্সদের সঠিক পদায়ন ও কর্মস্থলে রেখে জনগণের কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। এ জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। আশা করি, স্বাস্থ্য বিভাগ সেই ব্যবস্থাপনা সুনিপুণভাবে পালন করতে সমর্থ হবে। বেশ কিছুদিন ধরে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করছি যে কর্মস্থলে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া সরকার পুষ্টি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে নেতিবাচক দিক হলো- স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়েনি। বাজেট কম থাকার কারণে আউট অব পকেট বেশি হচ্ছে।
অর্থাৎ স্বাস্থ্যব্যয়ে সরকারের তুলনায় ব্যক্তির ব্যয় অনেক বেশি। এটি প্রায় ৬৭ শতাংশ। ওষুধের মূল্য বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্যব্যয় বৃদ্ধির এটি একটি প্রধান কারণ। এটি কমাতে হবে। বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশের তুলনায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ কম। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেসব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো সরকারের কঠোর নজরদারির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব স্টাইলে চলছে। চিকিৎসা ব্যয়ও পৃথক। চিকিৎসা নিতে গিয়ে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষাকে আরও কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে। গুণগত মান নিশ্চিত না করেই যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন শিক্ষক নেই। মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যুক্ত হাসপাতালে রোগী নেই। এটি হতে পারে না। এসব মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাস করে যে চিকিৎসক তৈরি হবে, তারা মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কোনো পজিটিভ ভূমিকা পালন করতে পারবে না; বরং তাদের কাছে চিকিৎসা নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।
তবে ডেঙ্গু নিয়ে সরকার তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার সঠিক হিসাব সরকারিভাবে নিতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আগামীতে ডেঙ্গু নির্মূলে পরিকল্পনা করতে সমস্যা হতে পারে। তথ্য গোপন করে সংকট নিরসন করা যায় না; বরং সঠিক তথ্য-উপাত্ত থাকলে পরিকল্পনা গ্রহণে সুবিধা হয়। আর একটি বড় সমস্যা হলো, আমাদের দেশের রোগীদের একটি বড় অংশ চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী। এটি কমাতে হবে। দেশের চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে চিকিৎসকদের। কারণ, মানুষ প্রত্যাশিত চিকিৎসা পায় না কিংবা আস্থা রাখতে পারছে না বলেই বিদেশ যাচ্ছে। এখন মানুষকে আস্থায় আনতে হবে। সরকারকেও ভূমিকা নিতে হবে।
আরেকটি ইতিবাচক বিষয় হলো, স্বাস্থ্য বিভাগকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। একটি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, অন্যটি স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। এই ভাগের মধ্য দিয়ে কাজে আরও গতি বাড়বে। তবে যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় যে অনিময়-দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তা এখনও চলছে। এটি বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালেও কিন্তু যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হয়। সেখানে যেসব যন্ত্রপাতির দাম দুই কোটি টাকা হয়, সরকারি হাসপাতালে তা কিনতে দ্বিগুণ, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি ব্যয় হয়। সুতরাং সরকারের দায়িত্ব হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে কার্যক্রম সম্পন্ন করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো। তাহলেই জনগণ স্বাস্থ্যসেবার সুফল ভোগ করতে পারবে।
লেখক :সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন
মন্তব্য করুন