বিশ্বাস বিল্ডার্সের এমডি নজরুল ইসলাম দুলালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে বেআইনি ক্যাসিনো ব্যবসা, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলোর তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে দুদকের ক্যাসিনোবিরোধী টিমের সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। দুদক সূত্র জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে এর আগেও ভবন নির্মাণে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ এসেছে। ওই অভিযোগেরও অনুসন্ধান চলছে।
ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বাস বিল্ডার্সের এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব করা হয়েছে। আজ সেই নির্ধারিত দিন। তাকে ডাকা হয়েছিল গত ২৬ জানুয়ারি। ব্যক্তিগত কারণে তিনি জিজ্ঞাসাবাদের সময় পেছানোর আবেদন করলে তাকে ফের ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখ দেওয়া হয়।
ক্যাসিনোবিরোধী অনুসন্ধান ও তদন্ত টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তার নেতৃত্বে টিমের সদস্যরা আজ তাকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। টিমের সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, গুলশান আনোয়ার প্রধান, মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।
এমডি নজরুলের কাছে দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ঠিকাদার জি কে শামীমসহ অন্যান্য ব্যক্তির যোগসাজশে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ও ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নিয়েছেন। তাতে বিভিন্ন অনিয়ম ঘটিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অর্জন করে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বক্তব্য শোনা ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
ভবন নির্মাণে প্রতারণার অভিযোগ :রাজধানীর নিউমার্কেট-সংলগ্ন পশ্চিম পাশে 'নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স' ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে দুদকে পেশ করা অভিযোগে বলা হয়, ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে জমির মালিকদের সঙ্গে আবাসন কোম্পানি বিশ্বাস বিল্ডার্সের দালিলিক চুক্তি সম্পন্ন হয় ২০০৪ সালের ৮ নভেম্বর। চুক্তিতে বলা হয়, ভবনের ৪০ শতাংশ মালিক পক্ষ ও ৬০ শতাংশ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পাবে। হিসাব অনুযায়ী ১৭ তলা ভবনের মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৯২৫ দশমিক ৭২৮ বর্গফুট পাবেন মালিকরা। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্স পাবে ১ লাখ ৯১ হাজার ৮৮৮ দশমিক ৫৯২ বর্গফুট। এ ক্ষেত্রে জমির মালিকদের একটি বড় অংশের সঙ্গে চুক্তির বরখেলাপ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, এক একর ৩০ শতাংশ জমিতে নির্মাণ করা হয় বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবনটি। বংশ পরম্পরায় ওই জমির মালিকের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। কিছু মালিককে নানাভাবে ম্যানেজ করলেও ৩৪ জনকে ম্যানেজ করা সম্ভব হয়নি। ভবনে তাদের অংশও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তারা তাদের অংশ বুঝে পেতে নজরুল ইসলামকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন, মামলা করেছেন। তাতেও সমাধান হয়নি। মৃত সুরত আলীগং প্রথমে ওই জমির মালিক ছিলেন। পরে মৃত আব্দুর রহিমগং মালিক ছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, বিশ্বাস বিল্ডার্সের সঙ্গে ওই জমি রেজেস্ট্রির সময় ১৭ জন জমি মালিকের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। পরে ওই দলিল বন্ধক রেখে সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) থেকে ১৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। এরপর সালমা বেগমকে পুরো জমির মালিক উল্লেখ করে আরেকটি ভুয়া দলিল বানিয়ে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ওই ভবনের জমির মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রতারণা ও ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অনুসন্ধানের জন্য বিশ্বাস বিল্ডার্সের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নিয়ে জমির মালিকপক্ষের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
অবৈধ সম্পদের অভিযোগ :দুদকের ক্যাসিনোবিরোধী টিমের অনুসন্ধান শুরুর আগে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছিল। তবে সেই অনুসন্ধান শেষ করা হয়নি। পাঁচ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআইর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্নিষ্টদের কাছে পেশ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, প্রতারণা-জালিয়াতি করে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিয়ে মোটা অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করেছেন তিনি। এভাবে তিনি জিরো থেকে হিরো হয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, নজরুল ইসলাম তেমন লেখাপড়া করেননি। অষ্টম শ্রেণির জাল সার্টিফিকেটে তিনি বিলুপ্ত বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) জওয়ান হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এক সময় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এ বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে চাকরিচ্যুতও হন। তিনি ঝিনাইদহের শৈলকূপা ও মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।