চলতি বছর থেকেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নীতিগত সিন্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সহ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সভার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।

বুধবার শেরেবাংলা নগরস্থ  ইউজিসি কার্যালয়ে ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বৈঠকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

ইউজিসিতে দীর্ঘ সময় বৈঠকের পরে ঢাবি ও বুয়েট ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়য়ের উপাচার্যরা জানান নিজস্বভাবে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনের মাধ্যমে তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার পক্ষে তারা। তবে এই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের বলয়ে বিশেষ করে ডিন ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে তাদের অবস্থানের বিষয়ে এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেকেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিন্ধান্তের বাইরে এককভাবে কোনো সিন্ধান্ত দিতে পারি না। তাই একটু  সময় নিয়েছি।

বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাবির  ভিসি  প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আজকের বৈঠকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হায়েছে। কিভাবে একটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় ইউজিসি থেকে আমাদের কাছে সেই বিষয়ে মতামত চাওয়া হায়েছে। উপস্থি সবাই তাদের মতামত দিয়েছে। তবে আমরা বলেছি বিষয়টি একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

তিনি বলেন, ঢাবি  নিজস্ব রুল এন্ড ল’ তে চলে। আমরা চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নিতে হলে ঢাবির একাডেমিক কাউন্সিল এবং জেনারেল এডমিশন কমিটিতে আলোচনা করার দরকার আছে। আজকের এই সভায় যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে আমরা সেগুলো আমি কনভে করবো। খুই শিগগিরই আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহবান করে আমাদের সিদ্ধান্ত ইউজিসিকে জানিয়ে দেব।

বুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, বুয়েটের ভিসি হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আলাদা কোনো মতামত দিতে পারি না। তবে আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলে গিয়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা এটাই আজকের সভায় বলেছি। চলতি মাসের শেষের দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহবান করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের  বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা আগে থেকেই আলাদা ছিল। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে এখনতো নতুন করে আমাদের চিন্তা করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভিসি প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, আজকের সভায়  ভিসি হিসেবে আমাদের নিজেদের মতামত দেয়ার কোনও এখতিয়ার নেই। কাজেই  এ বিষয়ে কোনো সিন্ধান্ত দিতে হলেতো আমাদের ৩৩৩ জন একাডেমিক কাউন্সিণলরের ত মতামত নিয়েই সিন্ধান্ত দিতে হবে তবে সরকার যদি শুভ উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা সেটা অবশ্যই দেখব। আমার সদস্যদের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি বলেন, আজকের সভায় আসার আগে আমি ডিনদের সাথে বসেছিলাম। তারা বলেছেন আপনি সভায় যান, আগে জেনে আসুন। এরপর চূড়ান্ত জানাতে হবে। আপনি কি এই উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনা মন্তব্য করতে চাই না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, আমি ডিন পর্যায়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন এটা একটি বড় ডিসিশন। তাই এটা নিয়ে আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলে কথা বলার দরকার আছে। তাই আমি ১৬ তারিখ পর্যন্ত সময়ে নিয়েছি। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়রে একটি স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে চাই। সবাই তাদের সেই ডাইভারসিটি বজায় রাখতে চায়। তবে এটাও ঠিক ভাল দিক আছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার নামটি পরিবর্তন করে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা  নাম দেওয়া হয়েছে। এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রথমবার কেউ ভয় পেয়ে যদি না আসতে চায় তাহলেও পরের বছরগুলোতে  তারা সবাই চলে আসবে।

তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের একটি স্বতন্ত্রতা আছে। আমরা কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা  নিজেদের ক্যাম্পাসেই নিয়ে থাকি। বাইরের কোনও স্কুল কলেজে নেয়া হয়না। যখনই এই পরীক্ষা বাইরের কোনো কলেজে নেয়া হবে তখনি বিশৃংখলা তৈরির আশঙ্কা থাকবে।

বৈঠকের পর ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহিদুল্লাহ বলেন, আমরা আশা করছি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারব। ইউজিসি এ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে। ভর্তি পরীক্ষা ও পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় যথাসময়ে জানানো হবে।

এদিকে সভা সূত্রে জানা গেছে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আয়োজন নিয়ে নানা সমস্যার বিষয় তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা। তবে সকল সমস্যাকে পিছে রেখে এ প্রক্রিয়ার আওতায় আসার আহ্বান জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান। নতুবা তারা বড় ধরনের সমালোচনার মধ্যে পড়বেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অবশ্য এর আগে মঙ্গলবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সম্মেলন কক্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির ২৬২ তম সভায় অংশ নিয়ে প্রত্যেকেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে তাদের মতামত দেন।

তবে  বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) এর কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন  না। পরে  বুধবার  ইউজিসিতে এই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ অন্যদেরকেও তাদের মতামত জানতে পুনরায় ডাকা হয়।