সিঙ্গাপুরে প্রবাসী দুই বাংলাদেশির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়ে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথমজনের সংস্পর্শেই ছিলেন। এ দুই রোগীর সংস্পর্শে থাকা আরও ১৯ জনকে সিঙ্গাপুর সরকার কোয়ারেন্টাইন করে রেখেছে। তাদের মধ্যে ১০ জনই বাংলাদেশের নাগরিক।

বুধবার করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত দুই প্রবাসী বাংলাদেশির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, আক্রান্ত দু'জনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে প্রথমজন আইসিইউতে এবং দ্বিতীয়জন সাধারণভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সিঙ্গাপুর সরকার তাদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করবে এবং তারা নিয়মিতভাবে সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস সার্বক্ষণিক আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। চীনের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন সিঙ্গাপুরের প্রতি বিশেষ নজর রাখছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসা ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ থাকবে- আপনারা যথাসম্ভব ঘরের মধ্যে থাকবেন। বিশেষ করে কেউ কোনো আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে থাকলে তিনি যেন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইন করে থাকেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বৃতি দিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, নতুন এই ভাইরাস কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন পেতে আরও দেড় বছর লাগবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। এটি দীর্ঘ সময়। তাই এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই একমাত্র উপায়।

বিশ্বের মধ্যে চীন সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে ডা. ফ্লোরা বলেন, এ মুহূর্তে চীনের সাত হাজার ৩৩৩ জন সংকটাপন্ন রোগী রয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ঝুঁকির যে মাত্রা দেওয়া হয়েছে, তাতে চীনই অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। অন্য যেসব দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেগুলোকেও ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রাখা হয়েছে।

দেশে এখনও করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সন্দেহভাজন হিসেবে এ পর্যন্ত ৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। সন্দেহভাজন একজনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল, তার মধ্যেও করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। গত ১ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে আনা ৩১২ জনকে আগামী শনিবার পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। এরপর কোন প্রক্রিয়ায় তাদের রিলিজ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে।

ঢাকা থেকে কলকাতা যাতায়াত করা ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদেরও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে বলে এ সময় জানান আইইডিসিআর পরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।