প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৯-এ নোটবই সংক্রান্ত চারটি ধারা-উপধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন প্রকাশকরা। বাজারে নোট-গাইড বইয়ের কোনও অস্তিত্ব নেই দাবি করে তারা বলেন, অনুশীলনমূলক বইকে নোট গাইডের নাম দিয়ে নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা আইনে। তাই অনুশীলনমূলক বই প্রকাশের দাবিতে আগামী সোমবার সারা দেশের বইয়ের দোকান বন্ধ রেখে মানববন্ধন করবেন তারা।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি ও কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতিসহ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ১২টি সংগঠন।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে নোট-গাইডের সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, কিন্তু অনুশীলনমূলক বইয়ের কোনও সংজ্ঞা নেই। নোট-গাইড হচ্ছে পাঠ্যবইয়ে দেওয়া প্রশ্নের উত্তরগুলো সরাসরি থাকে, যা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে অনুশীলন বইয়ের বিষয়বস্তু হচ্ছে পাঠ্য বিষয়ের সহজে অনুধাবন, প্রশ্নের নমুনা, উন্নত উত্তর লেখন পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা অনুশীলন বই মুখস্ত করে না, করে কোনও লাভ নেই।’

তিনি বলেন, সরকার প্রবর্তিত সৃজনশীল পদ্ধতি সফলভাবে বাস্তবায়নে অনুশীলনমূলক বইগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষার্থীরা তো বটেই, শিক্ষকরাও এসব অনুশীলনমূলক বইয়ে দেওয়া নমুনা প্রশ্নগুলো দেখে সৃজনশীল পদ্ধতি রপ্ত করতে পেরেছেন। ফলে শিক্ষায় পাসের হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বইগুলো প্রকাশিত না হলে সৃজনশীল পদ্ধতি এত দ্রত এতটা সফলতার মুখ দেখত না।

খসড়া আইনটির চারটি ধারার সংশোধনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে, কোনও প্রকার নোট বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও প্রকাশ করা যাবে না। আইনটি যদি চূড়ান্ত হয় তাহলে বই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত আমরা প্রায় ২৪ লাখ মানুষ পথে বসে যাবে। শিক্ষাব্যবস্থারও অবনতি ঘটবে।’

সংগঠনের সহ-সভাপতি কামরুল হাসান শায়ক বলেন, ‘নতুন শিক্ষা আইন অনুশীলন করা হলে শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টার ও গৃহ শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আইনে অনুশীলন বইয়ের সংজ্ঞায়িত করতে হবে। আর মানোন্নয়ন এবং অনিয়ম নিয়ন্ত্রণের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘কোনও অনুশীলন বই থেকে প্রশ্ন কমন পড়েনি। এটা বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে এই বছরের প্রশ্ন করা হয়েছে। এই জন্য আমরা দায়ী নই। যারা প্রশ্নের প্রণেতা তারাই দায়ী। অনুশীলনমূলক গ্রন্থ প্রকাশনা বন্ধ হলে সরকার শত কোটি টাকা রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের অনুশীলন বই উপস্থাপন করা হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ সভাপতি মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, রাজধানী কমিটির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, ওয়েব প্রিন্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাব্বানি জাব্বার, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ওসমান গনি, পুস্তক বাঁধাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।