একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন শাখায় দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মঙ্গলবার বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় চারটি ভলিউমে ৩৯৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পাঁচ ব্যক্তির তিনজন হলেন- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার দিয়াসুর গ্রামের বাসিন্দা মোতাহার উদ্দিন সিকদার, সাধুহাটি গ্রামের ইনায়েত হোসেন মিয়া (বর্তমানে কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি) ও তার ভাই নিজামুল হক মিয়া ওরফে লুথু মোল্লা। তদন্তের স্বার্থে বাকি দু'জনের নাম প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে মোতাহার উদ্দিন সিকদার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক। অন্য এক আসামি দিয়াসুর গ্রামের এবিএম রফিকুল আলম সিকদার গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করায় তাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব আসামি মুক্তিযুদ্ধের সময় কাশিয়ানী এলাকার ছোট বাহিরবাগ, রামদিয়া বাজার পোস্টঅফিস, সিতারামপুর গ্রাম ও প্রিন্সিপাল আইয়ুবুর রহমানের বাড়িতে হত্যা, অপহরণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আটক, নির্যাতন ও লাশ গুমসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে। তাদের বিরুদ্ধে চার ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

এর আগে সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কথা জানান সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হাননান খান। এ সময় জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক এম সানাউল হকসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আসামিরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তায় সিরাজ মিয়াকে ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে, ওড়াকান্দি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আব্দুস ছালাম মিয়াকে ধরে নিয়ে হত্যা করে এবং সিতারামপুর গ্রাম ও এর আশপাশ এলাকায় নয়টি বাড়িতে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কাদের মোল্লা ও মকবুল হোসেনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। তারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় রামদিয়া বাজারে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনের অন্তত ৫০-৬০টি দোকান লুটপাট করে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর প্রিন্সিপাল আয়ুবুর রহমানের বাড়িতে লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর শুরু হয়ে গতকাল তদন্ত শেষ হয়েছে। আসামিদের মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি চারজনের মধ্যে পলাতক আসামি ইনায়েত হোসেন মিয়া, নিজামুল হক মিয়া এই আপন দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। অন্য দু'জনের বিরুদ্ধে এখনও পরোয়ানা জারি হয়নি। আসামিরা সবাই '৭১ সালে মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। বর্তমানে তাদের বেশিরভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থক বলেও জানানো হয়।