নাটক-সিনেমাপাড়ার অনেকের সঙ্গেই গভীর সখ্য ছিল নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমনের।

এই দম্পতির সঙ্গে প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ ছিল ছোট পর্দার এক অভিনেত্রীর। পাপিয়ার স্বামী কোনো ছবি তুললে এই অভিনেত্রীকে ট্যাগ করতেন। পাপিয়া তার দুষ্টু চক্রে শোবিজ জগতের অনেককে কীভাবে ব্যবহার করেছেন, তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

নরসিংদীতে পাপিয়া ও মতি সুমন গ্যাং কালচার চালু করেছিলেন। এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের নিজেদের গ্যাং গ্রুপের সদস্য করে নেন তারা। অনেকে মাসিক বেতন দিয়ে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির সংক্ষেপিত নামে গড়ে তোলা এই 'কেএমসি' গ্রুপের হয়ে কাজ করতেন। পাপিয়া ও সুমন ধরা পড়ার পর এ গ্রুপের সব সদস্য গা-ঢাকা দিয়েছেন।

নরসিংদীর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পাপিয়ার গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা টাকার বিনিময়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল করিয়ে দিত। কোনো কোনো সদস্য নিরীহ মানুষজনকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায়ও করেছে। কেউ কেউ অসামাজিক ছবি তুলে অন্যকে ফাঁসাত। স্থানীয় কারও এসব নিয়ে মুখ খোলার সাহস ছিল না।

নরসিংদীর একাধিক বাসিন্দা জানান, গত দু-তিন বছর ধরে পাপিয়া এক প্রকার শোডাউন করে এলাকায় চলাফেরা করতেন। কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মসূচিতে যোগদানের সময় পেছনে শত শত নেতাকর্মী নিয়ে মহড়া দিতেন তিনি। তার হোন্ডা বাহিনীর সদস্যরা পাপিয়ার আশপাশ ঘিরে থাকত।

পাপিয়ার অপরাধ সাম্রাজ্যের তথ্য জানতে তার ঘনিষ্ঠ নানা শ্রেণি-পেশার অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেলে পাপিয়ার ভাড়া করা কক্ষে যারা নিয়মিত যাতায়াত করতেন, কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাপিয়া বিশেষ কোনো সুবিধা নিয়েছেন কিনা, তাও জানার চেষ্টা চলছে।

এদিকে পাপিয়া ও মতি সুমনের অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। এরই মধ্যে পাপিয়ার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের বৈধ সূত্র দেখাতে না পারলে তা শেষ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমন এবং তাদের আরও দুই সহযোগী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহির্গমন গেট পার হওয়ার সময় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তারা ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

দুই সহযোগী ফের রিমান্ডে :এদিকে আদালত প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শামিমা নূর পাপিয়ার দুই সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তাইবা নূরের আবারও পাঁচ দিন করে রিমান্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ দিদার হোসাইন গতকাল রোববার শুনানি শেষে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে গতকাল ফের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে মীর শাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে দু'জনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীসহ এ দুই আসামির এ মামলায় পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।