- বাংলাদেশ
- নকল পণ্যের ভিড়ে আসল চেনা দায়
সমকাল অনুসন্ধান: ১
নকল পণ্যের ভিড়ে আসল চেনা দায়
বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি, বাড়ছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি

চারদিকে নকল ও অবৈধ পণ্যের ছড়াছড়ি। নকলের ভিড়ে আসল চেনা দায়। এর ফলে মার খাচ্ছে আসল পণ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, এমনকি জীবনরক্ষাকারী ওষুধও নকল হচ্ছে। দেশজুড়ে বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জঘন্য এ অপরাধ ঘটছে। দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রায় সব পণ্য নকল হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় শপিংমলে বিক্রি হচ্ছে দেদার। এমন কায়দায় নকল পণ্য তৈরি করা হচ্ছে যে অনেক ক্রেতার পক্ষে ধরা কঠিন। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর অবৈধ উপার্জনের লিপ্সার কারণে সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন ক্রেতারা। পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ছোট কারখানায় বানানো হচ্ছে বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল পণ্য। একশ্রেণির অপরাধী আবার বিদেশ থেকে দামি ব্র্যান্ডের কোনো পণ্যের প্যাকেট বা লেভেলের নকল দেশে নিয়ে আসছেন। এরপর ওই প্যাকেটে নকল পণ্য ঢুকিয়ে তা বাজারজাত করছেন। নকল পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করতে বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে। বিভিন্ন অভিযানে পণ্য আটক হচ্ছে। অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এরপরও নকল পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করা যাচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নকল ও অবৈধভাবে বাজারে ছাড়া হচ্ছে এমন পণ্যের মধ্যে প্রসাধনী, ওষুধ, সিগারেট, মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস, নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প উল্লেখযোগ্য। বাজারে বিক্রি হওয়া প্রসাধনীর একটি বড় অংশই নকল। এগুলো ক্ষতিকর রাসায়নিক ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি। এসব প্রসাধনী ব্যবহার করে অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। নকল ওষুধের মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের পক্ষে নকল ওষুধ চেনা সম্ভব নয়। সরকারকে কর না দিয়ে অবৈধভাবে বাজারজাত হচ্ছে সিগারেট। মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারেও নকলের দৌরাত্ম্য রয়েছে। অপরাধীরা সরকারের রেভিনিউ স্ট্যাম্পও জাল করছে। এখানেও সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নকল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে সম্পৃক্ত এমন একজন ম্যাজিস্ট্রেট সমকালকে জানান, সবচেয়ে বেশি নকল হচ্ছে প্রসাধনসামগ্রী। দেশে ব্যবহূত প্রসাধনসামগ্রীর প্রায় ৪০ শতাংশ নকল। আর দেশে ব্যবহূত মোবাইলের ২০ শতাংশ নকল। নকল ইলেকট্রনিকস পণ্যের আয়ু স্বল্প হওয়ায় দেশে ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যে। নকল মোবাইলের রেডিয়েশন উচ্চমাত্রার।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত ঠেকানো না গেলে তা একদিকে দেশের অর্থনীতিকে আরও ক্ষতির মুখে ফেলবে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়বে। তাই নকল পণ্য উৎপাদন ঠেকানোর ব্যাপারে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এটি করা না গেলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। সরকারের রাজস্ব আহরণে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সমকালকে বলেন, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে নির্দেশনা দিয়েছেন, নকল ও ভেজাল বন্ধ করা হবে। সে অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। বিএসটিআইকে বলা হয়েছে সব ধরনের পণ্যের মান যাচাই করতে। প্রয়োজনীয় অভিযান চালাতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য যারা বাজারজাত করবে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিভিন্ন পক্ষের অভিযান সব সময় চালু থাকবে। পাশাপাশি যারা সৎভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে এবং মানসম্পন্ন পণ্য বাজারজাত করবে, সরকার তাদের উৎসাহিত করবে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সমকালকে বলেন, নকল পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। এ কাজে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া উচিত। এ অপরাধের জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থা আইন বাস্তবায়নে অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু অভিযানের পরও থেমে নেই অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাকেও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সংস্থাগুলোকে আইন বাস্তবায়ন জোরদার করতে হবে। নকল পণ্য কখনও কখনও জীবন ধ্বংস করছে। এ কারণে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করলে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বন্ধ হবে। নকল পণ্য তৈরি বন্ধে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা নিতে হবে, বিশেষ করে শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম সমকালকে বলেন, নকল পণ্য রোধে সরকারের সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিযোগিতা কমিশনকে বিষয়টি জোরালোভাবে দেখতে হবে। কমিশন এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি বলেন, যারা এসব পণ্য তৈরি করছে, তাদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু অভিযানে কারখানা সিলগালায় সমাধান হবে না। কারণ, পরে তারা অন্য স্থানে অবৈধভাবে উৎপাদন করছে।
নকল ও ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে র্যাব মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ সমকালকে বলেন, যারা পণ্য নকল করছে, ভেজাল মেশাচ্ছে এরা নীরব ঘাতক। ফঁ?াসিই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। এদের বিরুদ্ধে আইন আরও কঠোর করতে হবে। বাড়াতে হবে জরিমানার হারও। নিরাপদ খাদ্য আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখতে হবে। নকল ও ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা জরুরি বলেও তিনি এ সময় উল্লেখ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে নকল পণ্যবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি সমকালকে বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে নানা ধরনের পণ্য নকল করা হচ্ছে। একটি শ্রেণি রয়েছে, যারা নকল পণ্য তৈরি করে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক টাকার মালিক হতে চায়। আবার কেউ কেউ টিকে থাকার জন্য নকল পণ্য তৈরি করে। বড় কিছু কোম্পানি এমন কিছু পণ্য তৈরি করছে, যা মূলত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসা থেকে হটিয়ে দিচ্ছে। তারা বড় কোম্পানির স্টিকার ও লোগো নকল করে পণ্য বাজারজাত করছে। কোন ধরনের উদ্যোক্তা কোন ধরনের পণ্য উৎপাদন করবেন- এর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। এতে বাজার ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য থাকবে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক (আইন) এস ও এম রাশেদুল কাইয়ুম সমকালকে বলেন, নকল পণ্য থামানো না গেলে তা বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে। বাজারে নকল পণ্য থাকলে বিদেশি অনেক কোম্পানি এ দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবে। যারা বিনিয়োগ করেছে, তারা বাজার হারালে নতুন করে বিনিয়োগে যাবে না। তিনি বলেন, কোনো কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করতে বিপুল ব্যয় হয়। নকলের কারণে এই ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। নকল রোধে এখনই পদক্ষেপ জোরদার করা উচিত।
সংশ্নিষ্টরা আরও জানান, নকল পণ্যের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কোথায় অভিযোগ জানানো হবে- এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো উইং সরকারের নেই। বাণিজ্য বা শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ ধরনের একটি উইং সরকারের থাকা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
মূল আস্তানা পুরান ঢাকা : নকল পণ্যের পাইকারি বাজার হিসেবে পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকার 'খ্যাতি' দেশজুড়ে। সেখানকার গলি-ঘুপচিতে বহুতল আবাসিক ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে প্রসাধনী, প্লাস্টিকের অবৈধ কারখানা ও গুদাম। এসব অবৈধ গুদাম বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও ঝুঁকির কারণ। নকল পণ্যের গুদাম থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় জীবনও দিয়ে দিতে হয়েছে ৭১ জনকে। নকল বডি স্প্রের কারখানা ও গুদাম থেকে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল।
পুরান ঢাকায় প্রসাধনী, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, রাসায়নিক, ওষুধের পাইকারি ব্যবসা বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে এসব কারবার। নকল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযানের পর জরিমানা ও কিছুদিন কারাভোগ করে অনেকেই আবার নতুনভাবে একই অপরাধে জড়ায়। র?্যাব সূত্রে জানা যায়, পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা ত্বক ফর্সা করার ক্রিমে উচ্চমাত্রায় পারদ ও হাইড্রোকুইনান পাওয়া গেছে। যেগুলো মুখে দিলে চামড়া ফ্যাকাসে ও সাদা হয়ে যায়। ঢাকার আশপাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং মফস্বলে এ ধরনের ক্রিমের চাহিদা বেশি।
পুরান ঢাকা ছাড়া কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুরে নকল পণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন চক্র সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। গত জানুয়ারিতে কুমিল্লা থেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে সাবান, ওয়াশিং পাউডার, সুজি, নুডলস, টয়লেট ক্লিনার, কোকোনাট অয়েল, চা-পাতাসহ ৪৫ ধরনের নকল পণ্য জব্দ করা হয়। মুরাদনগরে 'হুমায়ুন সোপ ফ্যাক্টরি' নামে নকল পণ্য তৈরির কারখানায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় কারখানার পরিচালক সবুজ মিয়াকে (৪০) এক বছরের সশ্রম কারাদ এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের নকল পণ্য জব্দ করে পুলিশ।
দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা : বিদেশি নামি ব্র্যান্ডের নকল পণ্য দেশে তৈরি হলে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দুটি ঘটনার উদাহরণ দিয়েছেন র্যাবের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি জানান, সম্প্রতি কোরিয়াভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি স্যামসাং হাইকোর্টে রিট করে। সেখানে বিবাদী করা হয় আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, র্যাবপ্রধান, ডিএমপি কমিশনারসহ আরও কয়েকজনকে। স্যামসাংয়ের পণ্য নকল হচ্ছে এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নির্দেশনা চেয়ে ওই রিট করা হয়।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক বয়লার বিস্ম্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকে। এতে অনেকে প্রাণও হারান। জাপানের একটি বিশ্বখ্যাত 'কিটজ' ব্র্যান্ডের বয়লার গাজীপুরের একটি কারখানায় বিস্ম্ফোরিত হয়েছে- এটা জানার পর সেখান থেকে প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। এরপর তারা গাজীপুরের ওই কারখানা পরিদর্শন করে। এতে যে তথ্য উঠে আসে, তা ছিল সত্যি চমকপ্রদ। জাপানের বিশেষজ্ঞ দল দেখে, ওই কারখানায় তাদের কোম্পানির নকল লেবেল সাঁটানো নকল বয়লার লাগানো ছিল। এরপর তারা জানতে পারেন, জাপানের ওই কোম্পানির নকল বয়লার আরেকটি দেশ থেকে তৈরি করে বাংলাদেশে এনে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি বড় চক্র। বাংলাদেশে ব্যবহার করা বয়লারের ৫০ শতাংশ নকল বলে তাদের পরীক্ষায় উঠে আসে। এরপর তারা সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ দিয়ে ওই চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে র্যাবকে চিঠি দেন। তারা এও জানান, বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ না নিলে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করবেন। পরে র্যাব বি 'কিটজ' ব্র্যান্ডের নকল বয়লার আমদানির সঙ্গে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে পুরান ঢাকায় অভিযান চালায়। ওই চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করে র্যাব।
চলছে অভিযান ও জরিমানা : নকল পণ্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে আসছে র্যাব। সংস্থাটির কাছ থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৮ সালে নকল পণ্যের বিরুদ্ধে মোট ১৭৪টি অভিযান পরিচালনা করেছে তারা। নকল পণ্য জব্দের ঘটনায় মামলা হয় ৪০৫টি। জরিমানা করা হয় এক কোটি ছয় লাখ ৬০ হাজার ৮৮১ টাকা। নকল পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে সম্পৃক্ত থাকায় কারাদণ্ড দেওয়া হয় ২৪৮ জনকে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে নকল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে ১৯৯টি; মামলা করা হয় ৭০০টি। ২০১৯ সালে নকল পণ্য জব্দ করার ঘটনায় জরিমানা আদায় করা হয় চার কোটি ৪৬ লাখ ১২ হাজার ৭৮৮ টাকা। দুই বছরে মোট অভিযান হয়েছে ৩৭৩টি। দুই বছরের পরিসংখ্যান তুলনা করে বেরিয়ে আসে নকল পণ্য ইস্যুতে অভিযান, গ্রেপ্তার ও জরিমানা দিন দিন বাড়ছেই। তবে র্যাবের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমকালকে জানান, যে পরিমাণ অভিযোগ প্রতিদিন তাদের কাছে আসছে, সেই তালে অভিযান চালানোর মতো জনবল তাদের নেই।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধ প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রির অভিযোগে মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই ৯৪টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে। আটটি কারখানা সিলগালা ও ২৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ দিয়েছে। এ ছাড়া আবার প্রসাধনী ভরে (রিফিলিং) বাজারে বিক্রি জন্য রক্ষিত ১৮ ট্রাক নামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর কৌটা ধ্বংস করেছে সংস্থাটি।
মন্তব্য করুন