রাজধানীর পাঁচতারা হোটেল ওয়েস্টিনে বহিস্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার গেস্টদের তালিকায় হোমরাচোমরাদের নাম পাওয়া যায়নি। যে ১০ জন গেস্টের নাম পাওয়া গেছে তারা সাধারণ পর্যায়ের। হোটেল কর্তৃপক্ষ গতকাল রোববার পাপিয়ার ১০ গেস্টের নামসহ ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার থাকা-খাওয়া ও মদের বিলের তথ্যপ্রমাণ জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে।

পাপিয়ার গেস্টদের তালিকায় হোমরাচোমরা কারও নাম না থাকলেও খাওয়া ও মদের বিলের টাকার পরিমাণ অস্বাভাবিক বিবেচনায় এই অর্থের উৎস সম্পর্কে অনুসন্ধান করছে দুদক।

কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওয়েস্টিন হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান গতকাল রোববার দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজের কাছে পুরুষ ও নারীসহ দশ গেস্টের নাম এবং তাদের থাকা, খাওয়া, মদ ও লন্ড্রি বাবদ ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬১ টাকার বিলের  নথিপত্র জমা দিয়েছেন।

দুদককে দেওয়া এসব নথিপত্র থেকে জানা গেছে, পাপিয়া ওই ১০ গেস্টকে সঙ্গে নিয়ে ওয়েস্টিন হোটেলে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাত ২টায় আসেন। ওই দিনই হোটেলের ছয়টি কক্ষ ভাড়া নেন তারা। এর মধ্যে পাপিয়া ওঠেন প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে।

পাপিয়া তার গেস্টসহ ওই হোটেলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি (গ্রেপ্তারের দিন) পর্যন্ত ছিলেন। মোট ১২৯ দিন অর্থাৎ চার মাসের কিছু বেশি সময় তারা বিভিন্ন সময়ে ২৪-২৫টি কক্ষে অবস্থান করেন। তারা কক্ষগুলো বদল করে থেকেছেন। পাপিয়া ছিলেন ২২০১ নম্বর প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারের দিন বুক করা ছিল তিনটি কক্ষ।

গেস্টদের থাকা, খাওয়া, মদ ও লন্ড্রি বাবদ মোট তিন কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬১ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কম্পিউটার থেকে বিলের প্রিন্ট কপি দেওয়া হয়েছে দুদককে। দশ গেস্টের নাম ও তাদের ভোটার আইডি কার্ডও জমা দেওয়া হয়েছে।

ওই দশ গেস্টের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও সাতজন নারী। তিন পুরুষ হলেন- মো. আবদুল কাদের সোহাগ, আবদুর রউফ রাব্বি ও এমএ জাহিদুল ইসলাম খান। সাত নারী হলেন- হাসি আক্তার, ফারহানা আক্তার, ডলি মীর, লায়লা আক্তার, মাহি, কান্তা আক্তার ও সুমী হাসান। তারা সবাই নরসিংদী এলাকার বলে জানা গেছে।

হোটেলে পাপিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের সামনের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ সিডি করে দেওয়া হয়েছে। এতে পাপিয়ার গেস্টদের আসা-যাওয়া, চলাচলের তথ্য পাওয়া যাবে। শিগগির পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলখানা থেকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আনা হবে। ওই সময় তাকে বিল পরিশোধের টাকা, তার কাছ থেকে জব্দ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অর্থসম্পদের বৈধ উৎস জানাতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে দুদক আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাপিয়া দম্পতির দেশ-বিদেশে অর্থসম্পদের খোঁজ করতে গত ৫ মার্চ দুদক উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ স্বাক্ষরিত চিঠি ৫৯ দেশি-বিদেশি ব্যাংকের এমডি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিএফআইইউতে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাংকে জমানো টাকা, মেয়াদি আমানত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বাড়ি ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শামিমা নূর পাপিয়া, তার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়ি্যবা, পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১। ওই সময় তাদের কাছ থেকে জাল টাকা, ডলারসহ প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। বর্তমানে ডিবির রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।