অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেল-জরিমানার ঘটনায় করা রিটের সত্যায়িত অনুলিপি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এতে সাংবাদিক রিগ্যানকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে পাঠানো ত্রুটিপূর্ণ নথি হাইকোর্টে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসকসহ অভিযুক্তরা যে প্রক্রিয়ায় সাংবাদিক রিগ্যানকে সাজা দিয়েছেন, তা সংশোধনের আর সুযোগ রইল না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের দেওয়া লিখিত আদেশে বলা হয়, 'নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কুড়িগ্রামের মোবাইল কোর্ট মামলা নং-০৬/২০২০ এর মূল নথি তলবকৃত নথি হিসেবে অত্র (এ রিট মামলার) রুলের সাথে (শুনানির জন্য) সংযুক্ত থাকবে।'

এ বিষয়ে রিটকারীর আইনজীবী ইশরাত হাসান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ মার্চ এ মামলায় হাইকোর্টের আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি পেয়েছি। এতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভুলে ভরা নথিপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে নথি সংশোধনের সুযোগ আর সংশ্লিষ্টদের থাকছে না।

এর আগে গত ২৩ মার্চ এ রিটের শুনানিতে নথিপত্রে অসঙ্গতি তুলে ধরে ইশরাত হাসান আদালতে বলেছিলেন, 'সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে সাজা দেওয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেওয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হলো। এটা কীভাবে সম্ভব? ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম এবং তার পিতার নাম একই লেখা হয় কীভাবে?' তখন আদালত বলেছিলেন, 'আমরা এসব নথি পড়েছি। প্রতিটি শব্দ পড়েছি। অনেক অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনো কাজ করে তখন তার ফুট প্রিন্ট রেখে যায়।' পরে হাইকোর্ট ওইদিন অভিযুক্ত কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক রিগ্যানের করা অভিযোগ থানায় মামলা হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। ওই এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া হাইকোর্টের আদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতে রিগ্যানকে দেওয়া সাজাও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।

সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি রিগ্যানকে গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মাদক রাখার অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ১৬ মার্চ অভিযুক্ত কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকসহ তিন ম্যাজিস্ট্রেটকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করে সরকার। তবে এর আগেই ১৫ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ এ বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন; যার শুনানি নিয়ে ওই দিনই হাইকোর্ট সাংবাদিক রিগ্যানের বিরুদ্ধে মামলা ও সাজার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ মার্চ আদেশ দেন হাইকোর্ট।