- বাংলাদেশ
- ব্যারাকের পাশাপাশি আবাসিক হোটেলেও থাকবে পুলিশ
ব্যারাকের পাশাপাশি আবাসিক হোটেলেও থাকবে পুলিশ
করোনায় আক্রান্ত ডিএমপির দুই সদস্য

ফাইল ছবি
করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন ঝুঁকি নিয়ে। অন্যদিকে তাদের ব্যক্তিগত পরিচর্যা, অবসর, বিশ্রাম এবং ঘুমের সময়ও থাকতে হচ্ছে ঝুঁকিতে। কারণ ব্যারাকে বা লাইন্সে পুলিশ সদস্যরা যেভাবে থাকেন, তাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। এরই মধ্যে নতুন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দুই সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আরেকজন গাড়ির চালক। ঢাকার বাইরেও একাধিক পুলিশ সদস্য এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ রোধে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঠিক করা হয়েছে, ব্যারাক ও লাইন্সে গাদাগাদি কমাতে সংশ্নিষ্ট এলাকার শূন্য আবাসিক হোটেলগুলোতে আপৎকালীন সময়ে তারা বসবাস করবেন। এ ছাড়া ঢাকার ৫০টি থানার পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রোটেশনভিত্তিক দায়িত্ব পালনের।
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সুস্থ থেকে জনসেবা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে এমন বেশকিছু জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। ঢাকা রেঞ্জের জেলা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যতিক্রমী পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায় সমকালকে বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা অসীম ঝুঁকি নিয়ে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিশনার প্রত্যেক থানার ফোর্সকে ভাগ করে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন- যাতে একসঙ্গে অনেকের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি না হয়। এ ছাড়া ব্যারাকের কিছু ফোর্স আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এতে ব্যারাক কিছুটা হলেও ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান জানান, রেঞ্জের ১৩টি জেলায় পুলিশ ফোর্সদের সুরক্ষা ও বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসেবা নির্বিঘ্ন রাখতে বেশকিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। থানার ডিউটি, বাইরে টহল, চেকপোস্ট, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা ও ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশকে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। যাতে কোনো কারণে একজন সংক্রমিত হলেও অধিকাংশই নিরাপদে থাকেন। সব পুলিশ লাইন্সের চলাচল ওয়ানওয়ে করা হয়েছে। থানার ভেতরে তাঁবু দেওয়া হয়েছে, যাতে আপৎকালীন সময়ে কেউ সেখানে থাকতে পারেন। থানার আশপাশের খালি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ভবনেও ফোর্সদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার জন্য যদি একের পর এক পুরো থানার সব ফোর্সকেই সরিয়ে নিতে হয়, তাহলে ওই এলাকার নিরাপত্তা দেবে কে? তাই পুলিশের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি যাতে সর্বনিম্ন করা যায়, সে ব্যাপারে নতুন নতুন ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সচেতনতা তৈরি, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছানো, লকডাউন নিশ্চিত করা এমনকি করোনা আক্রান্তের দাফনেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছেন পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে। আমরা একজনের হাতে খাবার তুলে দিয়ে তবেই না বলছি আপনি এবার ঘরে যান।
পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে জানান, অধিকাংশ সময় একাধিক ব্যারাক ও পুলিশ লাইন্স থেকে ফোর্স এনে একত্রিত করে দায়িত্ব বণ্টন করা হতো। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট ব্যারাক ও লাইন্সের ফোর্সকে টানা কয়েকদিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যরা এ সময় লাইন্সে অবস্থান করবে। এতে করোনাভাইরাস সবার মধ্যে ছড়ানোর ঝুঁকি কমবে।
একাধিক জেলার পুলিশ সুপার জানান, কোনো থানায় একজন পুলিশ সদস্যের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর স্বাভাবিকভাবেই থানার সব সদস্যকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হচ্ছে। রাতারাতি বদলে ফেলতে হচ্ছে সেখানকার সব পুলিশ সদস্যকে। অন্য জায়গা থেকে ফোর্স বদলি করে এনে থানার কার্যক্রম সচল রাখতে হচ্ছে। এরই মধ্যে এমনটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায়। ভৈরব থানার একজন উপপরিদর্শকের করোনা ধরা পড়লে সরাসরি ১৫ পুলিশ সদস্যসহ ৬৪ ও চিকিৎসক, ওষুধ বিক্রেতাসহ ৮০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। বদলি হয়ে আসা পরিদর্শকসহ ৪০ পুলিশ সদস্য এখন ভৈরব থানায় কর্মরত। নতুন ফোর্সদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে এক বস্তা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পুরো থানা ধোয়ামোছা করা হয়েছে। থানার সুইপার, বাবুর্চি ও হাঁড়িপাতিল বদলে ফেলা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন মুকসুদপুর থানার ৬৬ পুলিশ সদস্য।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ফোর্সদের মধ্যে যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমিত না হয় সেজন্য বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন