- বাংলাদেশ
- করোনা উপসর্গে ডেন্টাল সার্জনসহ আরও ৭ মৃত্যু
করোনা উপসর্গে ডেন্টাল সার্জনসহ আরও ৭ মৃত্যু

করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও সাতজন মারা গেছেন। গত শনি ও গতকাল রোববার তাদের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে মারা গেছেন এবং উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তির মধ্যে ১৭ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছেন সংশ্নিষ্টরা। ৩০ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত করোনা উপসর্গে মৃত্যু হলো ১৩৩ জনের।
ব্যুরো, অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর- গতকাল সকালে ডেন্টাল সার্জন ফেরদৌস রহমান মারা গেছেন। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন। ফেরদৌস রহমান কয়েকদিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। স্বজনরা বারবার বলার পর এই চিকিৎসক গতকাল করোনা পরীক্ষার জন্য রাজি হন। তবে সকাল থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, ফেরদৌস রহমানকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তার নমুনা নিয়েছে আইইডিসিআর।
চিকিৎসক ফেরদৌসের এক বন্ধু জানান, ফেরদৌসের আজিমপুরে চেম্বার ছিল। তিনি নিয়মিত কাজ করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি সংক্রামিত হয়ে থাকতে পারেন। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ফেরদৌস নিজেই আইসোলেশনে ছিলেন। তার স্ত্রীও চিকিৎসক।
এদিকে রাজবাড়ী পৌর এলাকার লক্ষ্মীকোল গ্রামে গতকাল সীতানাথ প্রামাণিক (৭০) নামে একজন মারা গেছেন। তার নমুনা নেওয়া হয়েছে। গত শনিবার মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়ন বাজার সংলগ্ন এলাকার মহর আলী শেখ (৬০) মারা গেছেন। তার নমুনা নিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভৈরব বাজার গ্রামের খলিল মিয়া (৬৫) নামে একজন শনিবার রাতে শ্রীমঙ্গল সুরভীপাড়া আবাসিক এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় মারা যান। গতকাল তার নমুনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উপসর্গ থাকায় শ্রীমঙ্গল ডুলুবাড়ি এলাকায় নারায়ণগঞ্জফেরত এক ব্যক্তির নমুনা নেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা সদরের বুধপাশা গ্রামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন গতকাল। এ ঘটনায় মৃত নারী ও পরিবারের দু'জনের নমুনা নেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খাজুরা গ্রামের সামাদ আলী (৫০) শনিবার ফরিদপুর মেডিকেলে মারা যান। আতঙ্কে তার দাফনে কেউ এগিয়ে না আসায় পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠান। পরে তারা তার দাফন সম্পন্ন করেন। গতকাল সাভারে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। পৌর এলাকার ছায়াবীথিতে তার বাসায় মৃত্যু হয়। তার নমুনা নেওয়া হয়েছে।
তাদের মৃত্যু করোনাতেই :ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মারা যাওয়া ৪০ বছর বয়সী নারী এবং নাসিরনগর উপজলার মারা যাওয়া ৩৫ বছর বয়সী প্রবাসী করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তারা ৯ ও ৭ এপ্রিল মারা যান। গতকাল দুই উপজেলার ইউএনও তাদের করোনা শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মারা যাওয়া ব্যবসায়ী করোনা আক্রান্ত ছিলেন। ফলে শনিবার রাতে স্থানীয় প্রশাসন ৩ নম্বর ওয়ার্ডসহ মোট ৩৮৭ পরিবারকে লকডাউন করে। এ ছাড়া লোহাগাড়া সিটি হাসপাতাল এবং চার পরিবারে লকডাউন করা হয়।
নতুন আক্রান্ত, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন : দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আরও কয়েকজন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বরিশালে দু'জন, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একজন, নেত্রকোনায় দু'জন, যশোরের মনিরামপুরে স্বাস্থ্যকর্মী, কুমিল্লায় আক্রান্ত বাবার পর মেয়ে, গাইবান্ধায় একজন, চট্টগ্রামে শিশুসহ এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়জন, রাজশাহীর পুঠিয়ায় এক, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ব্যাংক কর্মচারী, খুলনা মেডিকেলের ল্যাবে একজন, চাঁদপুরে চিকিৎসকসহ আরও দু'জন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে একজন, মাদারীপুরের কালকিনিতে একজন এবং রাজবাড়ীতে পাঁচজন রয়েছেন।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন অফিসের নৈশপ্রহরী আক্রান্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় সিভিল সার্জনসহ ১২ কর্মকর্তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে পাঁচজন শনাক্ত হওয়ায় দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তিতাসে কুস্তিগিরসহ তিনজন শনাক্ত হওয়ায় রোগীদের বাড়িসহ পাঁচ গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে।
এদিকে মাঝে দু'দিন বিরতি দিয়ে গতকাল এক নারীসহ তিন ব্যক্তিকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছ। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আক্রান্ত সেই ব্যক্তিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি থেকে গাইবান্ধা হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কুমিল্লার দেবিদ্বারে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চালকের বাড়ি শনাক্ত করেছে প্রশাসন। গতকাল তার বাসাসহ তিনটি বাসা লকডাউন করা হয়।
গোবিন্দগঞ্জে চিকিৎসা পাচ্ছেন না আক্রান্ত ব্যক্তি : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও বিনা চিকিৎসায় দিন পার করছেন তিনি। নিজ বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে আছেন ওই রোগী। পরিবার জানায়, তার অবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বারবার প্রশাসনকে বলেও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন, অবস্থার অবনতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে লাশ হয়ে আসা আব্দুর রহিম নামে সেই রিকশাচালকের অবশেষে দাফন হয়েছে গতকাল। করোনা উপসর্গে মারা যাওয়ায় রহিমসহ পাঁচজনের নমুনা নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন