করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সিং ও অন্যান্য তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এমন বিধান রেখে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। রাষ্ট্রপতির অনুমতি পেলেই তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচার কাজ চালানোর উদ্যোগ নিতে পারবে আদালতগুলো।

বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। টানা এক মাস পর সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) আইন’ ২০২০ এবং ইনকামট্যাক্স (অ্যামেনমেন্ড) অর্ডিন্যান্স ২০২০ খসড়ারও।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিটিভির ক্যামেরার মাধ্যমে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওই ব্রিফিংয়ে অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের সরবরাহ করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এখন সংসদ চালু না থাকায় আইন করা যাবে না। ফলে জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন আইন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে অধ্যাদেশ আকারে জারি করবে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসার প্রথম দিনই এটি  সেখানে উপস্থাপিত হবে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে মর্মে আশা করা যায়।

তিনি জানান, ‘বিদ্যমান বিধান অনুযাযায়ী আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বা তাদের পক্ষে নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবী এবং সাক্ষীদের উপস্থিতির মাধ্যমে মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ মহামারি রোধকল্পে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কতিপয় ব্যতিক্রম ব্যতীত আদালতসহ সরকারি-বেসরকারি সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের সমাগম হয়, এমন সব কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, করোনাভাইরাসের কারণে জায়গায় সশরীরে আদালত চালানোর সুযোগ নেই। ভাইরাস সংক্রণের সম্ভবনা বেশি হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যার যার অবস্থানে থেকে যেন বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী আদালতে মামলার পক্ষরা বা তাদের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীদের সশরীরে উপস্থিতি থেকে মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। মানুষের সমাগম হয়, এমন সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মামলার বিচার কার্যক্রম করা জন্য আইনি বিধান করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, দীর্ঘ সময় ধরে আদালত বন্ধ থাকার মামলা জট যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বিচারপ্রার্থীরা বিচারপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে এবং বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম করার জন্য আইনি বিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট মনে করে। এজন্য ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য- প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০’ এর খসড়ার প্রণয়ন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এই ব্যবস্থায় আসামিকে জেলখানায় রেখে, আইনজীবীকে বাসায় রেখে ও সাক্ষীকে অন্য জায়গায় রেখে ভিডিও কনফারেন্সিং এবং অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করে বিচারকার্য করা সম্ভব হবে। এটাই হলো এই অধ্যাদেশের মূল বক্তব্য।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় সরকার শর্তসাপেক্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের শর্ত মানা হচ্ছে কিনা সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কঠোর অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জনগণকেও সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এটি নিয়ন্ত্রণ করা দুরস্কর হবে। সেজন্য মন্ত্রিসভা থেকে সর্ব সাধারণকে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। জনসাধারণও সতর্কতা অবলম্বন করবে বলে আশা করছে মন্ত্রিসভা।’