মহামারির ফলে বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে গেছে। এটি মূলত জনসাধারণের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেললেও, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শিক্ষা খাতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

কোভিড-১৯ চলাকালীন লকডাউনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্লাস নেয়ার জন্য নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে পাঠদান করতে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি বিবেচনায়, আরটিভি আয়োজিত ইজেনারেশন প্রেজেন্টস ‘রিইমাজিন এডুকেশন: প্যারাডাইম শিফট এমিড কোভিড-১৯’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয় যাতে সহযোগী ছিলো দ্য ডেইলি স্টার ও দৈনিক সমকাল।

ওয়েবিনারে প্রয়োজনীয় পলিসি সহায়তা, আধুনিক কোলাবোরেশন টুলস, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং স্টুডেন্ট লাইফ সাইকেল ম্যানেজমেন্ট সল্যুউশনের সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)সদস্য, শিক্ষা খাতে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ও ভাইস-চ্যান্সেলরসহ দেশি-বিদেশি আলোচকরা অংশগ্রহণ করেন।

ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, বিশ্বব্যাপী মোট শিক্ষার্থীর ৯১ শতাংশ তথা একদশমিক ছয় বিলিয়ন শিক্ষার্থী স্বশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের চেয়ে অধিক উন্নত প্রযুক্তি, যেমন- গেমিফিকেশন, ভার্চুয়ালাইজেশন,  অগমেন্টেডরিয়েলিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মত প্রযুক্তি যুক্ত করার সময় এসেছে।

আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি জায়ান্ট গুলো শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সমন্বিতভাবে শিক্ষাখাতে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করতে যাচ্ছে ও এডুকেশন ৪.০ যা ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর সাথে সম্পর্কিততা বাস্তবের রূপ নিচ্ছে।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং তাদের শিক্ষাদান প্রক্রিয়াকে নতুন রূপ নিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাথে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।একইসাথে, ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত বেকারত্বের বিষয়টিকে মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার পরিবর্তন ও দক্ষতার উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওয়েবিনারের সঞ্চালক সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, ভ্যাক্সিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত করোনার আগ্রাসণ চলতেই থাকবে, আর ভ্যাক্সিন কবে আবিষ্কার হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা কেউই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। আমাদের ও বসে থাকার সুযোগ নেই। প্রযুক্তিগত যে সক্ষমতা ডিজিটাল বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগানোর সময়এসেছে।

অনলাইনে দুরশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রেযে সীমাবদ্ধতাগুলো আলোচ করা তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি সীমাবদ্ধতাগুলো উৎরানোর জন্য আলোচ করা যে পরামর্শ ও সুপারিশ তুলে ধরেছেন; আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, করোনার এই লকডাউনের সময়েও দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নির্বিঘ্নে এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেবেন এবং বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।

মাইক্রোসফটের এশিয়া প্যাসিফিক এডুকেশন পার্টনার পরিচালক ড. রানী সারোজেনি বার্চমোর বলেন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ ডিজিটাল লার্নিং সল্যুউশন বাস্তবায়ন করেছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশে ও একই ধরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এর সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন,  অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আমরা ইতিমধ্যেই কার্যকরী কৌশল গ্রহণে কাজ করেছি। তাৎক্ষনিকভাবে, কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইন ক্লাসের নীতিমালা প্রদান করেছে।  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন এই শিক্ষা রূপান্তর গ্রহণ করতে সমর্থ কিনা সে বিষয়ে আমরা বিস্তারিত অনুসন্ধান করেছি। সরকারের কাছ থেকে শিক্ষাখাতের পলিসি সহায়তা পাওয়া জরুরী এবং আমরা এ বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি।।

এসএপি ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ইন্ডাস্ট্রি বিজনেস আর্কিটেক্ট অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, কোভিড-১৯  এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শক্তিশালী করতে প্রযুক্তির অনেক প্রয়োজন ছিলো। পরিপূর্ণ রূপান্তরে,আমাদেরকে অনলাইন  এডুকেশন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ব্যাক অফিস ব্যবস্থাপনার স্বয়ংক্রিয় করতে কাজ করতে হবে। এসএপি ব্র্যাকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সহায়তাকরছে, এবং অন্যদেরকেও অবশ্যই সহায়তা করতে পারবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাঅধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে ডিজিটাল ডিভাইসের অপ্রতুলতার বিষয়টি থাকবে না।

অনেক ক্ষেত্রেই সরকার জনগনকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।  এছাড়া আমরা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়া, তাদের সহায়তা করা, ট্যাক্স কমানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে ডিভাইসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত ও সাশ্রয়ী রাখতে চেষ্টা করছি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সহায়তা করতে আমরা প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্টানের সাথে কাজ করছি।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের চেয়ারম্যান প্রফেসরএ.কে. আজাদ খান বলেন, আমরা বেশ আগের থেকেই দূরশিক্ষণ চালু করেছি এবং আরও কনটেন্ট তৈরির কাজক রছিলাম। কোভিড-১৯ সেটিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। আমরা আগের থেকে এখন বেশি সক্রিয়। আমরা আশা করছি,  ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রান্তিক এলাকার শিক্ষার্থীসহ আমরা অধিক শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারবো।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) এর ভাইস চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আবেদিন বলেন,  শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন ইন্ট্যার‍্যাকশন বাড়াতে এআইইউবি ইতিমধ্যেই কার্যকরীভাবে টুলসের প্রয়োগ করেছে।  তাৎক্ষণিকভাবে মাইক্রোসফট টিমসের সহায়তায় আমরা ১১ হাজার শিক্ষার্থীকে অনলাইনে যুক্ত করতে ও ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু করতে পেরেছি।

ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) এর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মিলান পাগন বলেন, কোভিড-১৯  পরবর্তী সময়ে বিদেশি শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবেনা, বিশেষ করে এটি যদি অনলাইন এডুকেশনের সাথে সম্পৃক্ত থাকে।  আমরা কিছু নির্বাচিত মডিউল দেশে তৈরি করতে পারি এবং বাকিগুলো বাইরে থেকে তৈরি করে আনতে পারি।ৱ

ইজেনারেশন গ্রুপের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান এসএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, সচরাচর শিক্ষায় পূর্বে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ছিলো সহায়ক উপাদান, কিন্তু এখন এটি অনলাইন শিক্ষার প্রধান উপাদান। ইজেনারেশন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে এসএপি’র স্টুডেন্ট লাইফ সাইকেল ম্যানেজমেন্ট সল্যুউশন এবং ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট, চুয়েট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোসফটের মডার্ন ওয়ার্কপ্লেস সল্যুউশন বাস্তবায়ন করেছে।

ইউনির্ভাসিটি অব লিবারের আর্টস বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এইচএম জহিরুল হক বলেন,আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের সকল অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ অনলাইনেই করছি। আমাদের প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনা টিম প্রযুক্তিপ্রেমী এবং আমরা বিশ্বাস করছি অনলাইন শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা সফলতা পাব। আমরা আমাদের শিক্ষাদান প্রক্রিয়া চালিয়ে নিতে সেরা প্রযুক্তির যাচাই করছি।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম রুস্তম আলী বলেন, বর্তমানে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ যঅনলাইন টুলস বাধ্যতামূলত হয়ে উঠেছে। মাইক্রোসফট টিমসে অনেক ফিচার রয়েছে এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এটিব্য বহার করছে। আমরা খুবই আনন্দিত যে,  ইজেনারেশন আমাদের এইটুলসটি বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। আমরা আশা করছি, তাদের কাছ থেকে সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা শিগগিরই আমাদের ক্লাস শুরু করতে পারবো।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এমআর কবির বলেন, অনলাইনে ক্লাস নেবার পাশাপাশি আমাদেরকে শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের কথাও বিবেচনা করতে হবে। আমাদের সব শিক্ষার্থীই ঘরে বন্দী হয়ে আছে, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ঐসব শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

বুয়েটের সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এ কেএম আশিকুর রহমান বলেন, দেশজুড়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষকরা বেশি এগিয়ে আছেন।  এর মূল কারণ হল অনেক শিক্ষার্থীর কাছে ইইন্টারনেট এখনও সহজলভ্য নয়। তাই ডিজিটাল বৈষম্ যকমাতে ও শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যতোটা সম্ভব খরচ কমানোর চেষ্টা করা উচিত।

ওয়েবিনারের আগামী পর্বে ই-ব্যবসা খাত নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন। পর্বটি আরটিভি, দৈনিক সমকাল, দ্য ডেইলি ষ্টার, ইজেনারেশন এবং শামীম আহসান এর ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি