- বাংলাদেশ
- অনলাইনে গান গেয়ে অসহায় মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ
তরুণ শিল্পীদের উদ্যোগ
অনলাইনে গান গেয়ে অসহায় মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ

অনলাইন সঙ্গীত উৎসবে অংশ নেওয়া শিল্পীরা
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা’ করার আহবান জানিয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো করোনাযুদ্ধের এই কালেও সবাই যেন হৃদয়ের গভীরে সেই আহবান শুনতে পেয়েছেন। তাই তো নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। কবি তার হাতে লেখা পান্ডুলিপি, ক্রিকেটার তার কীর্তির স্মারক ব্যাট নিলামে বিক্রি করছেন। আর সেই অর্থ ব্যয় হচ্ছে অসহায় মানুষের কল্যাণে। এরই ধারাবাহিকতায় অনলাইনে গান গেয়ে করোনাদুর্গতদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করলেন তরুণ শিল্পীরা। ‘দি মিউজিশিয়ানস্’ নামের একটি ফেসবুক পেজের এই উদ্যোগের ফলে দেশে প্রথমবার ১০ দিনের অনলাইন সঙ্গীত উৎসবেরও স্বাদ পেলেন শ্রোতারা।
আয়োজনটির প্রধান উদ্যোক্তা গোবিন্দ দাস সমকালকে বলেন, ‘দেশের সব সংকটে শিল্পী সমাজ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বড় সংকটের জন্ম দিয়েছে করোনাভাইরাস। বিভিন্ন পেশার অজস্র মানুষ আপাতত বেকার হয়ে পড়েছেন। কবে নাগাদ তাদের আয়ের পথ সুগম হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। পাশাপাশি হতদরিদ্র-অসহায়রা তো আছেনই। বিপদগ্রস্ত এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটা উপায় খুঁজছিলাম। এখানে বলে রাখা ভালো, শিল্পীদের বড় অংশই অর্থ-বিত্তশালী নন। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করে, কোনো প্রতিষ্ঠানে বা ব্যক্তিগতভাবে গান শিখিয়ে উপার্জন করেন। করোনার কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় এখন তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। তাই আমাদের যে ‘অস্ত্র’, অর্থাৎ সঙ্গীতকেই পুঁজি হিসেবে নিয়েছি। গান গেয়ে, তবলা-বাঁশি বাজিয়ে আমরা আহবান জানিয়েছি সহৃদয়বান মানুষের কাছে, তারা যেন এই তহবিলে যতটুকু সম্ভব দান করেন। সেই অর্থ করোনার প্রভাবে অসহায়, কর্মহীন, দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।’
তিনি জানান, অনলাইন সঙ্গীত উৎসবের পরিকল্পনা করলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে তার মধ্যে সংশয় ছিল। কারণ বিভিন্ন স্থানে থাকা অনেক মানুষের সহায়তা ছাড়া এটা সফল করা সম্ভব নয়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে সব শিল্পী এক বাক্যে রাজি হয়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে এই আয়োজনে অংশ নিতে। আরও একটা বিষয়ে দ্বিধায় ছিলেন তিনি, অনলাইনে গান শোনার মানুষ জুটবে তো? সেই দ্বিধাও উবে গেছে হাজার-হাজার দর্শকের অংশগ্রহণে। ১২ মে উদ্বোধনের দিন থেকে প্রতি রাতে নির্ধারিত সময়ে দর্শক বেড়েই চলেছে। উদ্বোধনী পরিবেশনায় ছিলেন শিল্পী শ্রাবন্তী ধর। এরপর একে একে পরিবেশন করেন টিংকু শীল, দেবস্মিতা দে, সম্রাট শরিফুর রহমান, মাসাবা আহমেদ, ইউসুফ আহমেদ খান, অভিপ্রিয় চক্রবর্তী, পৌষ রাম সরকার, সুস্মিতা দেবনাথ শুচি, ডা. নীহার রঞ্জন দাস, জান্নাতুল ফেরদৌস মিলা, সমীরন দেওয়ান ও গোবিন্দ দাস। আর ২১ মে সমাপনী পরিবেশনায় ছিলেন প্রসিদ্ধ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী অভিজিৎ কুন্ডু।
পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা গোবিন্দ দাস বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। সেখানকার অভাবী মানুষদের সহায়তার উদ্দেশ্যেই দি মিউজিশিয়ানসের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু দিনে দিনে দেখা যায়, করোনায় গৃহবন্দি অনেক শিল্পীর অবস্থাও খুবই করুণ। তাই সংগৃহীত অর্থ দুই ভাগ করে বিপদগ্রস্ত শিল্পী ও দুঃস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তবে দর্শক-শ্রোতার অফুরাণ ভালোবাসা পেলেও তহবিলে জমা পড়া অর্থের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। সামর্থ্যবান মানুষের কাছে আমাদের তহবিলে সহায়তার আবেদন জানাচ্ছি। মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে ০১৫১৬১৪৮৪১২ (বিকাশ ও রকেট) যে কেউ যে কোনো পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিতে পারেন। এছাড়া গোবিন্দ চন্দ্র দাস, হিসাব নম্বর- ০১৭০২১৩৯৯৯৮১১, আইএফআইসি ব্যাংক, প্রধান শাখা বরাবরেও টাকা পাঠানো যাবে।’
মন্তব্য করুন