জ্ঞানভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার তাগিদ

সমকাল-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথিরা। রোববার তেজগাঁওয়ের টাইমস মিডিয়া ভবনে -সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | ০৬:০৯
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেলেও কিছু ক্ষেত্রে এখনও সক্ষমতা তৈরি হয়নি। ফলে দুর্যোগকালে অনেকেই লৈঙ্গিকসহ নানা বৈষম্যের শিকার হন। এ বৈষম্য দূরীকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
‘বিশ্ব দুর্যোগ প্রশমন দিবস’ উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকাল কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন অভিমত দেন বক্তারা। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং সমকাল। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘অসমতার বিরুদ্ধে লড়াই করি, দুর্যোগ সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ি’।
সমকালের সহযোগী সম্পাদক শেখ রোকনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিল্লুর রহমান, ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক সুব্রত পাল চৌধুরী, ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম, উপপ্রকল্প পরিচালক ইসমাইল হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার মানসুরুল হক, অধিদপ্তরের অধীন মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মুহম্মদ মবিনুর রহমান প্রমুখ।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর নতুন নতুন দুর্যোগ আসবে; বাড়বে তীব্রতা। তবে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দেশকে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কম হবে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্যোগ প্রশমনে আমাদের অবকাঠামোগত সক্ষমতা এখনও কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছেনি। এটি রাতারাতি করাও সম্ভব নয়। তবে আমাদের যে উন্নতি হয়েছে, তাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আশা করছি, সামনে এ বিষয়ে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
কামরুল হাসান বলেন, ‘দুর্যোগের সময় সুবিধাপ্রাপ্তদেরই সুবিধা দেওয়া হয়। বঞ্চিতরা সুবিধা পান না– বিষয়টি মাথায় রেখে এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য করা হয়েছে। সারাবিশ্ব এ প্রতিপাদ্য নিয়ে কাজ করছে। আমরা অসমতার বিরুদ্ধে কাজ করছি। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অবকাঠামোগতভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এখন আর সাধারণ ইস্যু নয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি জ্ঞানভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে নতুন প্রজন্ম যথেষ্ট সক্ষম। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই দুর্যোগ সহনশীল জাতি হয়ে ওঠা সম্ভব।’
অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নানা দুর্যোগ আমাদের নিত্যসঙ্গী। এসব ব্যবস্থাপনায় দেশ অনেক এগিয়েছে। আমাদের সক্ষমতাও তৈরি হয়েছে। আশা করছি, বিশ্বের রোল মডেল হতে পারব আমরা।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) নাহিদ সুলতানা মল্লিক। এতে তিনি দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বিভিন্ন দুর্যোগের বিপন্নতা হ্রাস; দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে কার্যকর সহায়তা কর্মসূচি; দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস; জরুরি সাড়াদানে মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ ছাড়া সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্কসহ দুর্যোগ-সংক্রান্ত গ্লোবাল প্রটোকল বাস্তবায়নেও সরকার সচেষ্ট।