- বাংলাদেশ
- স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না বন্দরনগরীতে
স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না বন্দরনগরীতে
সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে টালবাহানা চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে বিবেচিত চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির ক্রমশই অবনতি ঘটছে। করোনাবিষয়ক সরকারি সিদ্ধান্তগুলো ত্বরিতগতিতে বাস্তবায়ন না হওয়া এর অন্যতম একটি কারণ। চট্টগ্রামের ৯০টি বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১২টিতে করোনা চিকিৎসা শুরু করতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল ৪ এপ্রিল। কিন্তু দুই মাস পার হলেও বাস্তবায়ন হয়নি সেই সিদ্ধান্ত। ইম্পেরিয়াল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে করোনার জন্য অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল দুই সপ্তাহ আগে। সে সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয়নি।
গত মার্চে ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ চালু করা হবে। কিন্তু চালু হয়েছে মাত্র ১০টি। এদিকে ৫০টির বেশি শয্যা আছে এমন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীর পাশাপাশি করোনা রোগী ভর্তি করাতে সরকারের আরেকটি সিদ্ধান্ত এসেছিল গত সপ্তাহে। এ সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয়নি চট্টগ্রামে।
সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা অসহযোগিতা ও টালবাহানা করলেও চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের কারও বিরুদ্ধেই এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। করোনা শনাক্তের তিন মাস পরও দুই কোটি মানুষের চট্টগ্রামে শয্যা প্রস্তুত হয়েছে মাত্র ৩৩০টি! আইসিইউ বেড আছে মাত্র ২৬টি। এদিকে করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এ জেলায়। রোগী শনাক্তের প্রথম মাসে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা রোগী ছিল মাত্র ৭৮ জন। কিন্তু দ্বিতীয় মাসে এ সংখ্যা হয়েছে তিন হাজার ৩১৬ জন। হাসপাতালে মাত্র ৩৩০টি বেড থাকলেও এখন চট্টগ্রামে করোনা রোগী আছে প্রায় চার হাজার।
চার কারণে বেহাল স্বাস্থ্যসেবা :চট্টগ্রামের হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার এমন বেহাল দশার নেপথ্যে রয়েছে চার কারণ- প্রজ্ঞাপন জারির পর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কঠোরভাবে মনিটর না করা, স্থানীয় প্রশাসনের অদূরদর্শিতা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের অসহযোগিতা ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো
ব্যবস্থা না নেওয়া।
চট্টগ্রামে ডাক্তার ও হাসপাতাল মালিকরা দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশে রয়েছে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা। আরেকটি অংশে রয়েছে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা। তবে চট্টগ্রামে স্বাচিপের মূল নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করছে বর্তমান মেয়রের অনুসারীরা। বর্তমান মেয়রকে সামনে রেখে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু না করে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা পরিত্যক্ত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে নতুন করে সংস্কার করার প্রস্তাব দেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এ হাসপাতালকে এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা করা হয় কার্যত প্রায় দেড় মাস পর। ঝামেলা এড়াতে এটি মেয়রকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয় ২১ মে। কিন্তু এখানে রোগী ভর্তি শুরু হয় ৩ জুন থেকে।
রেলওয়ে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ থাকা রোগী ভর্তি শুরু হয় ২ জুন। অথচ এটি এক সপ্তাহের মধ্যে চালু করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ৪ মার্চ। এখন এটি চালু হলেও বেড প্রস্তুত হয়েছে মাত্র ৩৬টি। বন্দর হাসপাতালকে করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত করার কথা ছিল এপ্রিলে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের অদূরদর্শিতায় এটি এখনও প্রস্তুত হয়নি।
স্বাচিপ গঠিত করোনাবিষয়ক বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়ক ডা. আ হ ম মিনহাজুর রহমান বলেন, 'ইম্পেরিয়াল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল লোকবল নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। করোনা সেবার জন্য তৈরি হতে এগুলোর তাই আরও সময় লাগবে। তবে মা ও শিশু হাসপাতাল স্বেচ্ছায় করোনা রোগী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫০ শয্যা দিয়ে তারা এ সেবা শুরু করবে শনিবার থেকে। পর্যায়ক্রমে করবে ১০০ শয্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ হাসপাতালের নতুন ভবন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত আরও মাস দুয়েক আগে নিলে এখানেই এখন অন্তত ৩০০ করোনা রোগীর সেবা দেওয়া যেত।
সেবা না থাকায় চট্টগ্রাম ছাড়ছেন অনেকে :ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। গত দুই মাস সরকারের হয়ে করোনা কার্যক্রম মনিটর করেন তিনি। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সেই বিভাগীয় পরিচালকও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাননি চট্টগ্রামে। করোনা আক্রান্ত মাকে চিকিৎসা করাতে চট্টগ্রাম ছেড়ে তিনি ঢাকায় গেছেন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপও তাদের পরিবারের করোনা আক্রান্ত সব সদস্যকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যান। চাহিদামতো আইসিইউ সেবা না পেয়ে এস আলম গ্রুপের বড় ভাই মোরশেদ আলম মারা গেছেন চট্টগ্রামে। এছহাক ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও আইসিইউ সেবা না পেয়ে মারা গেছেন। এর আগে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আনা এক বৃদ্ধকে তার স্বজনরা কোনো হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পারায় অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান তিনি।
ক্ষুব্ধ নগরবাসীর মানববন্ধন :চিকিৎসা না পেয়ে চট্টগ্রামে একের পর এক রোগী মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ মানববন্ধন করেছে। ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সংহতি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক শীর্ষ নেতা। সভায় বক্তারা ভোগান্তি দূর করা না হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
সংশ্নিষ্টরা যা বলেন :চট্টগ্রামে সার্ভিল্যান্স টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, 'সরকারি সিদ্ধান্ত যে কেউ মানতে বাধ্য। তাই চট্টগ্রামের ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিককে প্রতিদিনের রোগী ভর্তির রেকর্ডসহ যাবতীয় বিষয় উল্লেখ করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নোটিশে কোনো হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তি না করে থাকলে তার যথোপযুক্ত কারণও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। ১০ থেকে ১২টি হাসপাতাল রিপোর্ট দিয়েছে। বিষয়টি এখন কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে।'
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ বলেন, 'অবকাঠামোগত ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাব থাকায় নতুন কয়েকটি হাসপাতাল চালু করতে সময় লেগেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কেন কভিড রোগীদের জন্য চালু করা যায়নি, সেটি পূর্বতন পরিচালক জানেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সমকালকে বলেন, 'সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আগের চেয়ে এখন শয্যাসংখ্যা বেড়েছে। কেন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জনবলসহ আনুষঙ্গিক নানা বিষয় থাকায় কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগছে।'
আইসিইউর দাবিতে সাদা কফিন কর্মসূচি :চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিসহ আরও আইসিইউ দেওয়ার দাবিতে প্রতীকী সাদা কফিন নিয়ে ব্যতিক্রমী বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে 'অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট করোনা'। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনটির নেতারা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কাঁধে একটা সাদা কফিন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মানববন্ধন করেন তারা। এতে বক্তব্য দেন অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট করোনা, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ডা. সুশান্ত বড়ূয়া, তানভীর হোসেন, অ্যাডভোকেট আমীর আব্বাস, বীষুময় দেব, আরিফ মইনুদ্দীন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম এখন 'পোর্ট অব করোনা'য় পরিণত হয়েছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলো একের পর এক রোগী ফেরত দিচ্ছে। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মানুষ মারা যাচ্ছে। তারা দ্রুত এ অবস্থা নিরসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
গত মার্চে ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ চালু করা হবে। কিন্তু চালু হয়েছে মাত্র ১০টি। এদিকে ৫০টির বেশি শয্যা আছে এমন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীর পাশাপাশি করোনা রোগী ভর্তি করাতে সরকারের আরেকটি সিদ্ধান্ত এসেছিল গত সপ্তাহে। এ সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয়নি চট্টগ্রামে।
সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা অসহযোগিতা ও টালবাহানা করলেও চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের কারও বিরুদ্ধেই এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। করোনা শনাক্তের তিন মাস পরও দুই কোটি মানুষের চট্টগ্রামে শয্যা প্রস্তুত হয়েছে মাত্র ৩৩০টি! আইসিইউ বেড আছে মাত্র ২৬টি। এদিকে করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এ জেলায়। রোগী শনাক্তের প্রথম মাসে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা রোগী ছিল মাত্র ৭৮ জন। কিন্তু দ্বিতীয় মাসে এ সংখ্যা হয়েছে তিন হাজার ৩১৬ জন। হাসপাতালে মাত্র ৩৩০টি বেড থাকলেও এখন চট্টগ্রামে করোনা রোগী আছে প্রায় চার হাজার।
চার কারণে বেহাল স্বাস্থ্যসেবা :চট্টগ্রামের হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার এমন বেহাল দশার নেপথ্যে রয়েছে চার কারণ- প্রজ্ঞাপন জারির পর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কঠোরভাবে মনিটর না করা, স্থানীয় প্রশাসনের অদূরদর্শিতা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের অসহযোগিতা ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো
ব্যবস্থা না নেওয়া।
চট্টগ্রামে ডাক্তার ও হাসপাতাল মালিকরা দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশে রয়েছে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা। আরেকটি অংশে রয়েছে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা। তবে চট্টগ্রামে স্বাচিপের মূল নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করছে বর্তমান মেয়রের অনুসারীরা। বর্তমান মেয়রকে সামনে রেখে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু না করে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা পরিত্যক্ত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে নতুন করে সংস্কার করার প্রস্তাব দেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এ হাসপাতালকে এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা করা হয় কার্যত প্রায় দেড় মাস পর। ঝামেলা এড়াতে এটি মেয়রকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয় ২১ মে। কিন্তু এখানে রোগী ভর্তি শুরু হয় ৩ জুন থেকে।
রেলওয়ে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ থাকা রোগী ভর্তি শুরু হয় ২ জুন। অথচ এটি এক সপ্তাহের মধ্যে চালু করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ৪ মার্চ। এখন এটি চালু হলেও বেড প্রস্তুত হয়েছে মাত্র ৩৬টি। বন্দর হাসপাতালকে করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত করার কথা ছিল এপ্রিলে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের অদূরদর্শিতায় এটি এখনও প্রস্তুত হয়নি।
স্বাচিপ গঠিত করোনাবিষয়ক বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়ক ডা. আ হ ম মিনহাজুর রহমান বলেন, 'ইম্পেরিয়াল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল লোকবল নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। করোনা সেবার জন্য তৈরি হতে এগুলোর তাই আরও সময় লাগবে। তবে মা ও শিশু হাসপাতাল স্বেচ্ছায় করোনা রোগী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫০ শয্যা দিয়ে তারা এ সেবা শুরু করবে শনিবার থেকে। পর্যায়ক্রমে করবে ১০০ শয্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ হাসপাতালের নতুন ভবন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত আরও মাস দুয়েক আগে নিলে এখানেই এখন অন্তত ৩০০ করোনা রোগীর সেবা দেওয়া যেত।
সেবা না থাকায় চট্টগ্রাম ছাড়ছেন অনেকে :ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। গত দুই মাস সরকারের হয়ে করোনা কার্যক্রম মনিটর করেন তিনি। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সেই বিভাগীয় পরিচালকও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাননি চট্টগ্রামে। করোনা আক্রান্ত মাকে চিকিৎসা করাতে চট্টগ্রাম ছেড়ে তিনি ঢাকায় গেছেন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপও তাদের পরিবারের করোনা আক্রান্ত সব সদস্যকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যান। চাহিদামতো আইসিইউ সেবা না পেয়ে এস আলম গ্রুপের বড় ভাই মোরশেদ আলম মারা গেছেন চট্টগ্রামে। এছহাক ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও আইসিইউ সেবা না পেয়ে মারা গেছেন। এর আগে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আনা এক বৃদ্ধকে তার স্বজনরা কোনো হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পারায় অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান তিনি।
ক্ষুব্ধ নগরবাসীর মানববন্ধন :চিকিৎসা না পেয়ে চট্টগ্রামে একের পর এক রোগী মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ মানববন্ধন করেছে। ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সংহতি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক শীর্ষ নেতা। সভায় বক্তারা ভোগান্তি দূর করা না হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
সংশ্নিষ্টরা যা বলেন :চট্টগ্রামে সার্ভিল্যান্স টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, 'সরকারি সিদ্ধান্ত যে কেউ মানতে বাধ্য। তাই চট্টগ্রামের ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিককে প্রতিদিনের রোগী ভর্তির রেকর্ডসহ যাবতীয় বিষয় উল্লেখ করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নোটিশে কোনো হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তি না করে থাকলে তার যথোপযুক্ত কারণও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। ১০ থেকে ১২টি হাসপাতাল রিপোর্ট দিয়েছে। বিষয়টি এখন কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে।'
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ বলেন, 'অবকাঠামোগত ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাব থাকায় নতুন কয়েকটি হাসপাতাল চালু করতে সময় লেগেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কেন কভিড রোগীদের জন্য চালু করা যায়নি, সেটি পূর্বতন পরিচালক জানেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সমকালকে বলেন, 'সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আগের চেয়ে এখন শয্যাসংখ্যা বেড়েছে। কেন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জনবলসহ আনুষঙ্গিক নানা বিষয় থাকায় কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগছে।'
আইসিইউর দাবিতে সাদা কফিন কর্মসূচি :চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিসহ আরও আইসিইউ দেওয়ার দাবিতে প্রতীকী সাদা কফিন নিয়ে ব্যতিক্রমী বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে 'অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট করোনা'। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনটির নেতারা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কাঁধে একটা সাদা কফিন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মানববন্ধন করেন তারা। এতে বক্তব্য দেন অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট করোনা, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ডা. সুশান্ত বড়ূয়া, তানভীর হোসেন, অ্যাডভোকেট আমীর আব্বাস, বীষুময় দেব, আরিফ মইনুদ্দীন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম এখন 'পোর্ট অব করোনা'য় পরিণত হয়েছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলো একের পর এক রোগী ফেরত দিচ্ছে। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মানুষ মারা যাচ্ছে। তারা দ্রুত এ অবস্থা নিরসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
মন্তব্য করুন