কুয়েতে গ্রেপ্তার এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আবেদন পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠাবে। নিষেধাজ্ঞার আবেদনটি দুদকে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পাপুলের এই স্বজনদের বিদেশ গমনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি গতকালই দুদকের দায়িত্বশীল পদস্থ এক কর্মকর্তা মৌখিকভাবে পুলিশের বিশেষ শাখাকে অবহিত করেছে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হবে। বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় পাপুলের নামও থাকছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পাপুলের বিদেশে থাকা ও গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি দুদক এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত নয়।

দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এমপি পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (এনআইডি) তাদের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাপুলের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিনের স্বাক্ষর করা চিঠি গতকাল বুধবার তাদের ঢাকাস্থ ও নিজ নিজ এলাকার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।

পাপুলের বিদেশে অবস্থান করা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি অবগত না হওয়ায় এই ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত নথি ও তথ্যও চাওয়া হয়েছে। পাপুল ছাড়া অভিযুক্ত অন্য তিন হলেন- তার স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি কাজী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন।

দুদক সূত্র জানায়, ওই চারজনের নামে পাঠানো আলাদা আলাদা চিঠিতে তাদের পাসপোর্ট, এনআইডি, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের (টিন) ফটোকপি ও তাদের ব্যক্তিগত ঠিকানার তথ্য চাওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ জুনের মধ্যে দুদকের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা বরাবর এসব তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।

দুদক পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার, মানি লন্ডারিং, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে গত মার্চ থেকে। ১৭৪ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগে বলা হয়, তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

কুয়েতের গোয়েন্দাদের হাতে পাপুলের গ্রেপ্তার হওয়ায় পর অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে জোরেশোরে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন এই করোনাকালে নিয়মিত অফিস করছেন ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুলকে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে গত ৭ জুন।

দুদকে পাপুলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ :পাপুলের বিরুদ্ধে দুদকে পেশ করা অভিযোগে বলা হয়, তিনি কুয়েতে মানব পাচার করে ১৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। বিদেশে ব্যবসার নামে মানব পাচারই তার মূল কাজ। অভিযোগে হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়, তার একান্ত কাছের ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ও হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অবৈধভাবে অর্জিত ২৮০ কোটি টাকা দেশে আনেন ২০১৬ সালে। কয়েকজন ব্যাংক মালিক অর্থ পাচারে পাপুলকে সহযোগিতা করেছেন। ৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন পাপুল। স্ত্রীর নামে একই ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকার শেয়ার কিনে অংশীদার হয়েছেন। গুলশান-১-এর ১৬ নম্বর সড়কে গাউসিয়া ডেভেলপমেন্টের প্রকল্পে মেয়ে ও স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট, গুলশান-২-এর পিংক সিটির পেছনে গাউসিয়া ইসলামিয়া প্রকল্পে স্ত্রীর নামে ৯ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। স্ত্রী ও নিজের নামে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৯১ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের ঢাকার ওয়েজ আর্নার্স শাখায় পাপুলের স্ত্রীর নামে ৫০ কোটি টাকার ওয়েজ ওনার্স বন্ড ও মেয়ের নামে ২০ কোটি টাকার বন্ড আছে। শ্যালিকার নামে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনে নিজে ব্যবহার করছেন। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে নিজ নামে ৪০ কোটি, মেয়ের নামে ১০ কোটি ও স্ত্রীর নামে ২০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি ছয়তলা বাড়ি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, শ্যালিকার নাম ব্যবহার করে দিগন্ত মিডিয়ায় বেনামে পরিচালক ছিলেন পাপুল। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ছিল। মীর কাসেম আলীর বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

দুদকে পেশ করা অভিযোগে আরও বলা হয়, ইউসিবিএল থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে পাপুল রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে পাথর সরবরাহ করছেন। পাপুলের অপকর্মের সহযোগী হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলার একটি উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের এক সদস্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওই অভিযোগে।