কুয়েতে অর্থ ও মানব পাচারের দায়ে এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল গ্রেফতার হওয়ার পর নানা আলোচনার মধ্যে সেখানে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামকে সরিয়ে মেজর জেনারেল মো. আশিকুজ্জামানকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কুয়েতে বাংলাদেশ মিশন প্রধান পর্যায়ে এই পরিবর্তন আনার কথা জানানো হয়।

এ পরিবর্তন সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সমকালকে জানান, এস এম আবুল কালামের দায়িত্ব পালনের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আরও দু’মাস আগেই। কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তিনি দু’মাস বেশি থেকেছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে তিনি ফিরে আসছেন, অন্য আর কোন কারণ নেই।

পাপুল কাণ্ডের সঙ্গে এস এম আবুল কালামের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, তার ছেলে পাপুলের কোম্পাানিতে চাকরি করত, এমন অভিযোগও এসেছে। তবে রাষ্ট্রদূত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য-প্রমাণও নেই। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যেগে এস এম আবুল কালামের বিষয়ে তদন্ত করতে আগ্রহী নয়, কারণ যেসব কারণে মন্ত্রণালয় একজন রাষ্ট্রদূতের বিষয়ে তদন্ত বা এ ধরনের পদক্ষেপ নেয় তার দায়িত্বপালনকালে সে ধরনের কারণ ঘটেনি, কিংবা অভিযোগও আসেনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা তথ্য-প্রমাণ আসলে সেটি অব্যশই নিয়ম অনুযায়ী খতিয়ে দেখা হবে।

এস এম আবুল কালাম পেশাদার কূটনীতিক ছিলেন না। চট্টগ্রামের নামকরা ব্যবসায়ী এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবেই তাকে স্থানীয়া চিনতেন। ২০১৬ সালে হঠাৎ করেই তাকে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে সরকার। তবে তিনি আলোচায় আসেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়েতের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশি এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে প্রকাশ হওয়া অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগের  খবরকে ‘ফেক নিউজ’ উল্লেখ করে বার্তা পাঠিয়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সম্মেলনে পাপুলের বিরুদ্ধে খবরকে ‘ফেক নিউজ’ বলার পর থেকেই সমালোচকদের তোপের মুখে ছিলেন রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম। এরপর এমপি পাপুল গ্রেফতার হওয়ার থেকেই কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামের সঙ্গে পাপুলের সখ্যতা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ আসছিল কুয়েতে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে। অবশ্য এস এম আবুল কালাম সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এক ভিডিও বার্তায় তার বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।

নতুন নিয়োগ সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বল হয়, নতুন নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আশিকুজ্জামান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান ১৯৮৮ সালে। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সিনিয়র ডিরেক্টিং স্টাফ (আর্মি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। এর আগে সিয়েরা লিওন, আইভোরি কোস্ট এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন আশিকুজ্জামান। ডিফেন্স স্টাডিজ এবং স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।

এ দিকে কুয়েকের ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস সোমবার খবর দিয়েছে কুয়েতের জাতীয় পরিষদের দুই সদস্যকে এমপি পাপুল ১১ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। অবশ্য এই ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে আরও আগেই কুয়েতের অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছ। তবে আরব টাইমমেস প্রতিবেদনে এই প্রথম দুই এমপির নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন সালাহ আব্দুলরেদা খুরশিদ এবং সাদুন হাম্মাদ আল ওতাইবি।