- বাংলাদেশ
- ঢাবির অনলাইন ক্লাস: সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতের দাবিতে সমাবেশ
ঢাবির অনলাইন ক্লাস: সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতের দাবিতে সমাবেশ

ছবি: সমকাল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অনলাইন ক্লাসে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার দাবিতে সমাবেশ করেছে ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন। সোমবার এই দাবিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করেন সংগঠনটির ঢাবি সংসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ, সহ-সভাপতি জয় রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ জামিল প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে, কোনরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া অনলাইন ক্লাস চালু করা নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক ছাত্রদের প্রতি কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণ। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী পাহাড়সহ এমন সব দুর্গম অঞ্চলে বাস করে, যেখানে নূন্যতম নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার ব্যর্থ। এই ছাত্ররা ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। অনেক ছাত্র খুবই দরিদ্র, অনেকে টিউশনি করে নিজের খরচ চালায়। লকডাউনের কারণে এদের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ অনলাইন ক্লাসের ডেটা কেনার অতিরিক্ত খরচের বোঝা এদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বৈষম্য প্রতিহত করতে হবে। নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য সমস্ত লেকচার ডাউনলোড করার সুযোগ রাখতে হবে, যেন পরেও দেখা যায়। এ জন্য এটেন্ডেন্স গণনা করা চলবে না। অনলাইন ক্লাসের সমস্ত ডেটা খরচ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের দিতে হবে।
তারা বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী এই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। অথচ এদের কথা বিবেচনা না করেই, কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি না নিয়ে শতবর্ষ উদযাপনের নামে অনলাইন ক্লাস ছাত্রদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হলো। আমাদের শিক্ষকেরা একবারও ভাবলেন না, এই মহামারি পরিস্থিতিতে তাদের ছাত্ররা মানসিকভাবে কী অবস্থায় আছে। তাদের ঘরে পরিবার নিয়ে দুইবেলা খাবার খাওয়ার মতো পয়সা আছে কি-না। শতবর্ষে পা দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের এমন দায়িত্বহীনতা দুঃখজনক। এর অবসান ঘটাতে হবে। পূর্ণাঙ্গ জরিপ চালিয়ে সব ছাত্রের ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে। যাদের সহযোগিতা দরকার সহযোগিতা দিতে হবে। রাষ্ট্রের সহযোগিতা নিতে হবে, সবার জন্য পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক কভারেজ নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই কেবল এই বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস চালিয়ে কার্যকরীভাবে নেওয়ার কথা ভাবতে পারে, তার আগে নয়।
সমাপনী বক্তব্যে সাখাওয়াত ফাহাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইন ক্লাস কখনোই শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সমতুল্য হতে পারে না, যেহেতু এখানে ছাত্র-শিক্ষক যোগাযোগ অনেক বেশি সীমিত। তারপরও দীর্ঘ মহামারির মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে এর গুরুত্ব আছে। সেই গুরুত্ব হারিয়ে যায়, যখন আমরা দেখি, এই পাঠদান প্রক্রিয়াকেও ছাত্রদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নানা ডামাডোলের মধ্যে আমরা যেটা ভুলে যাচ্ছি বারবার, এই দেশে একটা মহামারি চলছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়। ঘরে ঘরে রোগী। এই অবস্থায় কোনো সচেতন শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয় স্থিরচিত্তে অনলাইন ক্লাস করতে বসা। এরমধ্যে আবার বৈষম্যের এই আয়োজন! আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, ছাত্রদের সাত দফা মেনে নিন। সবার সমস্যা দেখুন, সমাধান করে তবেই অনলাইন ক্লাস নিন। আমাদের একজন সহপাঠীও যেন বঞ্চিত না হয়। শিক্ষা কার্যক্রমকে শ্রেণিবৈষম্যের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা এই অপচেষ্টা সহ্য করবে না।
মন্তব্য করুন