- বাংলাদেশ
- সাবরিনা-আরিফ দু'জনই জেকেজির 'বেতনভোগী'
রিমান্ডে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ
সাবরিনা-আরিফ দু'জনই জেকেজির 'বেতনভোগী'

শুরু থেকেই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক সাবরিনা চৌধুরী নিজের সঙ্গে জেকেজির যোগসূত্র এড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসছে উভয়েরই নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার কথা। ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী দু'জনই ছিলেন কাগজে-কলমে জেকেজির 'বেতনভোগী'। জেকেজি থেকে আরিফ মাসে এক লাখ ২৭ হাজার ও চেয়ারম্যান হিসেবে সাবরিনা ৩০ হাজার টাকা নিতেন। সম্মানী হিসেবে এই টাকা নিতেন তারা।
পুলিশ এরই মধ্যে জেকেজি থেকে বেতন নেওয়ার এই স্লিপ উদ্ধার ও জব্দ করেছে। তবে কাগজে-কলমে উল্লেখিত এই বেতন ছাড়াও নানাভাবে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন তারা। যদিও সাবরিনা কর্মীদের বলতেন, দায়িত্বশীল পদে থেকেও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সম্মানী হিসেবে খুব কম টাকা নিচ্ছেন তিনি। জেকেজি কেলেঙ্কারির আরও তথ্য বের করতে সাবরিনা ও তার স্বামীকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তারা একজন আরেকজনের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। একে অপরকে 'জীবন ধ্বংসের জন্য' দোষারোপ করেন।
মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে সাবরিনা দাবি করেছেন, শুরুতে জেকেজির প্রায় সব কাজের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট ছিলেন তিনি। পরে তাদের জালিয়াতির বিষয় জানতে পেরে জেকেজির কাছ থেকে দূরে সরে আসেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও তিনি বিষয়টি জানিয়েছিলেন। আরিফ চৌধুরীর কারণে জেকেজির এই পরিণতি। অন্যদিকে আরিফ চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা করোনা টেস্টের নামে জালিয়াতিতে জড়িয়েছে। এ ঘটনায় তার দায় নেই।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, জেকেজির সবকিছু দেখভাল করতেন আরিফ ও তার স্ত্রী সাবরিনা। অফিস, কম্পিউটার, কর্মচারী- সবকিছুই তাদের তত্ত্বাবধানেই চলেছে। এখন জালিয়াতির বিষয় সামনে আসায় কেউ দায় নিতে চাইছেন না।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন হেলথকেয়ার, সংক্ষেপে জেকেজি। পরে বেরিয়ে আসে, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিলেও বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। নমুনা পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদও দিচ্ছিল তারা।
ডিবির উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, স্বামী-স্ত্রীকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার আবার আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে।
গত ২৩ জুন জেকেজির সিইও আরিফসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২৪ জুন জেকেজির কর্মচারী হুমায়ুন কবীর ও তানজিনা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মোট চারটি মামলা করা হয়। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেকেজির সঙ্গে করা সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের চুক্তি বাতিল করে। ১২ জুলাই জেকেজির জালিয়াতির মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয় ডা. সাবরিনাকে।
জেকেজি তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের সনদ দেয়। তার মধ্যে আইইডিসিআরের মাধ্যমে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনার সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০টি রিপোর্ট তারা গুলশানের কার্যালয়ের ১৫ তলার একটি ফ্লোরে বসে ল্যাপটপে তৈরি করে। ওই ফ্লোরে একটি ল্যাপটপ, একটি বিছানা আর টেবিল ছাড়া কোনো সামগ্রী ছিল না। জেকেজির সাত-আটজন কর্মী দিনরাত ওই ল্যাপটপে বসে ভুয়া রিপোর্ট বানাতেন।
মন্তব্য করুন