- বাংলাদেশ
- বড় ধরনের ব্যয় সংকোচন নীতিতে সরকার
বড় ধরনের ব্যয় সংকোচন নীতিতে সরকার
সাশ্রয় হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা

করোনা মহামারির মধ্যে বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অর্থবছরের শুরুতে বড় ধরনের ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি যানবাহন কেনা বন্ধ, বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত, আপ্যায়নভাতাসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থছাড় স্থগিত ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কৃচ্ছ্রসাধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় সংকোচনের কৌশলের পথে হাঁটছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, করোনা সংকটে অর্থনীতি স্থবির। ফলে রাজস্ব আয়ে প্রচুর ঘাটতি হয়েছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় সাশ্রয় করতে হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা এটিকে সময়োচিত পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, বর্তমান বাস্তবতায় ব্যয় সংকোচনের বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৫ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। এতে করে সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরশীলতা বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে।
জানা গেছে, ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপির) আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে এবং গতকাল থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপিতে 'নিম্ন বা কম অগ্রাধিকার প্রকল্প'গুলোর অর্থছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে। তবে স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো এর আওতার মধ্যে পড়বে না। অর্থাৎ ওই দুই মন্ত্রণালয়ের এডিপিভুক্ত সব প্রকল্পই বাস্তবায়িত হবে। এর বাইরে বাকি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অর্থছাড় হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় হিসাব করে দেখেছে, কম অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোয় অর্থছাড় স্থগিত করায় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে, এবারের এডিপিতে মোট প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কম অগ্রাধিকার। অবশিষ্টের ৪০ শতাংশ উচ্চ এবং বাকি ৩০ শতাংশ মধ্যম অগ্রাধিকার প্রকল্প। উল্লেখ্য, নতুন অর্থবছরের এডিপিতে এক হাজার ৫০০টি প্রকল্পের বিপরীতে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই হিসাবে মোট প্রকল্পের ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৬৯টি প্রকল্পের অর্থছাড় স্থগিত করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অর্থনীতির অবস্থা ভালো হলে বিষয়টি পর্যালোচনা করে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। তিনি আরও বলেন, মধ্যম পর্যায়ের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় রাশ কিছুটা টেনে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেখেশুনে টাকা খরচ করতে হবে। বাস্তবায়ন জরুরি কিনা, তা বিবেচনায় আনতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়, সীমিত সম্পদের ব্যয়সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলোর উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এডিপির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর অর্থছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে। উচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো যথারীতি বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। তবে মধ্যম অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হলে নিজ দায়িত্বে টাকা ব্যয় করা যাবে।
যোগাযোগ করা হলে বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত সরকারের ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগটি অত্যন্ত ভালো ও সময়োপযোগী হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, করোনাকালে অর্থনীতি স্থবির। রাজস্ব আয়ে শ্নথগতি। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় সংকোচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, এ বছর রাজস্ব আয় তেমন বাড়বে না। যেটা করতে হবে তা হলো, যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে। তাহলে নিয়মিত করদাতাদের ওপর চাপ কমবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন) এডিপির কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থছাড় স্থগিত করা হয়। এতে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতা চলতি অর্থবছরের শুরুতে দ্বিতীয় দফায় ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিল সরকার।
জানা গেছে, এর আগে সরকারি যানবাহন কেনা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে আরেক পরিপত্র জারি করে আগামী ছয় মাসের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সব ধরনের নতুন-পুরোনো গাড়ি কেনা স্থগিত করে। এতে প্রায় পাঁচশ' কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনাকালে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে আপ্যায়নভাতাসহ অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এ খাতে ব্যয় খুব বেশি নয়। তার পরও খরচ বাদ দেওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন