গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুক্তরাজ্যে পলাতক চৌধুরী মঈন উদ্দিনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দেওয়ায় ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলকে অভিনন্দন জানিয়েছে 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'। 

পাশাপাশি অবিলম্বে যুক্তরাজ্যে পলাতক যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈন উদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানকে দণ্ডভোগের জন্য বাংলাদেশে পাঠাতেও আহবান জানানো হয়েছে।

সোমবার সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই আহবান জানানো হয়।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, 'ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মুক্তিযুদ্ধকালে ১৮ জন বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বৃটেনে পলাতক আলবদর নেতা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী চৌধুরী মঈন উদ্দিনকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল যুদ্ধাপরাধী বলেছেন এবং এর জন্য এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৬০ হাজার পাউন্ডের ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে। গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত চৌধুরী মঈনউদ্দিনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করার জন্য আমরা ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাবার পাশাপাশি আমরা এই যুদ্ধাপরাধীর ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের তীব্র নিন্দা করছি।'

বিবৃতি আরও বলা হয়, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারের সময় '৭১-এ বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী চৌধুরী মঈন উদ্দিনকে যথারীতি আদালতে সমন করা হয়েছিল এবং অন্যান্য অভিযুক্তের মতো আত্মপক্ষ সমর্থনের সব রকম সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এই ঘৃণিত গণহত্যাকারীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছিল। ট্রাইবুনালে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায়ে চৌধুরী মঈন উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল, হত্যাকারী ব্রিটেনে অবস্থান করায় ট্রাইবুনালে প্রদত্ত দণ্ড কার্যকর করা যায়নি। চৌধুরী মঈন উদ্দিনের মতো '৭১-এর আরেক শীর্ষ গণহত্যাকারী আন্তর্জাতিক অপরাধী ট্রাইবুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জহ্লাদ আশরাফুজ্জামান দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। পশ্চিমা দেশসমূহের আইন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে চৌধুরী মঈন উদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের মতো গণহত্যাকারীরা সে সব দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে এবং এসব দেশ যেহেতু মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না সেহেতু বিভিন্ন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীরা ইউরোপ ও আমেরিকাকে গণহত্যাকারী ও অন্যান্য ভয়ঙ্কর অপরাধীদের নিরাপদ স্বর্গে পরিণত করতে চাইছে। এসব দেশের সরকার এবং নাগরিক সমাজকে উপলব্ধি করতে হবে গণহত্যার মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে হলে গণহত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তির কোনও বিকল্প নেই।

যুক্তরাজ্যে পলাতক দুই যুদ্ধাপরাধীকে দেশে ফেরত পাঠানোর আহবান জানিয়ে এতে আরও বলা হয়, 'আমরা আবারও বৃটিশ ও মার্কিন সরকারের নিকট আহ্বান জানাব- ইসলামের দোহাই দিয়ে গণহত্যাকারী এসব ভয়ঙ্কর অপরাধীকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়া হলে তাদের ঘোষিত 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' তারা কখনও জয়ী হতে পারবে না। কারণ চৌধুরী মঈন উদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের মতো ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরীহ মুসলিম নাগরিকদের ভেতর ইসলামের নামে সন্ত্রাসী জিহাদী উন্মাদনা সৃষ্টির বিভিন্ন জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। এসব দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায়, আইনের শাসন এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে চৌধুরী মঈন উদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানকে দণ্ডভোগের জন্য বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। আমরা আশা করব বঙ্গবন্ধুর পলাতক হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের পাশাপাশি ট্রাইবুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত একাত্তরের গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও কার্যকর কূটনৈতিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে।'