কভিড-১৯ নির্মূলে নিরাপদ ভ্যাকসিনের সর্বজনীন, সময়োপযোগী, সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত বণ্টন এবং সুষম অধিগম্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের বিদায়ী স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান। শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসুসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান। জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহাপরিচালক গেব্রেয়েসুস বিদায়ী স্থায়ী প্রতিনিধিকে সফলভাবে তার মেয়াদ সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের চলমান কার্যক্রম ও নানাবিধ উদ্যোগকে সাধুবাদ এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভকারী এই সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সমর্থন দান ও সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে তিনি জনবহুল রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কভিড পরিস্থিতি তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সঠিক সিদ্ধান্ত এবং যথাযথ দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে করোনা সংকট মোকাবিলা করছে। এ সময় তিনি করোনা ভ্যাকসিনের উৎপাদন, সুষম বণ্টন ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ-সংক্রান্ত তহবিলে বাংলাদেশের ৫০ হাজার ডলার প্রদানের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত আহসান বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বর্তমান সরকারের এক যুগের বিভিন্ন সাফল্যগাথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তিনি শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার রোধ, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, পুষ্টি নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ফলপ্রসূ উদ্যোগ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালককে অবহিত করেন। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য, অটিজম, বুদ্ধি ও অন্যান্য স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের যথাযথ যত্ন ও সেবার বিষয়টিকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের ব্যক্তিগত প্রয়াস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে, বিশেষ করে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

ড. গেব্রেয়েসুস জেনেভায় কর্মরত থাকা অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় রাষ্ট্রদূত আহসানের হাতে একটি বিশেষ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের অবসর-পরবর্তী জীবনের সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন। জেনেভাস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রায় ছয় বছর দায়িত্ব পালন করে রাষ্ট্রদূত আহসান তার সুদীর্ঘ ৩৫ বছরের কূটনৈতিক কর্মজীবন শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসছেন।