তিতাসে দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে একটি চক্র নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ঘুষের বিনিময়ে গ্রাহককে অবৈধ সংযোগ পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে গ্যাস চুরি– হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা এ চক্র করছে না। এ কারণে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে বছরের পর বছর।
গ্যাস চুরি বন্ধে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না সিন্ডিকেটের নানা অপতৎপরতায়। অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই ওই চক্র তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। সৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চলে কূটচাল। তিতাসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহর বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিতাসের সূত্র জানিয়েছে, গ্যাস চুরি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় এমডির বিরুদ্ধে ক্ষেপেছে দুর্নীতিবাজরা। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নামে-বেনামে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হারুনুর রশীদকে হয়রানি করছে চক্রটি।
সূত্র জানিয়েছে, এর আগে কয়েকজন এমডির বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেটটি একই কায়দায় ষড়যন্ত্র করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবেক এমডি মীর মসিউর রহমান, মোস্তফা কামাল, প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহসহ অনেকের বিরুদ্ধে জ্বালানি বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নামে-বেনামে চিঠি দিয়ে প্রমাণ ছাড়াই দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ এমডি পদে দায়িত্ব নেওয়ার ২১ মাসে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮৬টি গ্যাসের চুলা, ৫১৫টি শিল্প, ৫২৯টি বাণিজ্য, ১৭৯টি ক্যাপটিভ ও ৫৪টি সিএনজি গ্রাহকের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ৭৪৪ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ করেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে বরখাস্ত, ১৪ জনকে সাময়িক বরখাস্তসহ মোট ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ সময় ১ হাজার ৫০ জনকে বিভিন্ন শাখায় বদলিও করেন তিনি। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গত জুন পর্যন্ত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অন্তত ৪০৪ কোটি টাকা আদায় করা হয়।
তিতাসের দুই ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, এমডির এসব কঠোর সিদ্ধান্তে নাখোশ হন তিতাসের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। অবৈধ সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ওই চক্র এমডির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তারা নামে-বেনামে নানা ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠি
হারুনুর রশীদ মোল্লাহর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি চিঠি জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলা পাঁচ সদস্য়ের একটি কমিটি গঠন করে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মো. আলতাফ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং উপমহাব্যবস্থাপক (এইচআর) শহীদুল ইসলাম বিন হেলালকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়।
কমিটির আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন সমকালকে জানান, তারা কাজ শুরু করেছেন। মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার এ পরিচালক বলেন, আমরা সব বিষয় খতিয়ে দেখব। যা সত্য, তাই তুলে ধরা হবে প্রতিবেদনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ভিত্তিহীন অভিযোগগুলো তদন্তাধীন। তার পরও কুচক্রী মহল বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিতাসের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে তিতাস গ্যাস পরিচালিত অভিযানে যাদের স্বার্থহানি হয়েছে, সেই সিন্ডিকেট সদস্যরাই আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা কল্পিত অভিযোগ ও অপপ্রচার চালাচ্ছে।