আমার কাছে বলধা গার্ডেন উদ্ভিদের এক বিস্ময়কর পাঠশালা। প্রতিবারই সেখান থেকে নতুন করে পাঠ নিয়েছি। জেনেছি, শিখেছি। কিছুদিন আগে গার্ডেনের সিবিলি অংশে গেলাম গড়শিঙার ছবি তুলতে। গাছটি একেবারেই অন্ধকারে, এককোণে। ফুল না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছি। পথের ধারে সুদর্শন রাজঅশোক ফুটেছে। পুকুরঘাটের পাশে কণ্টকলতার ফুলও পাওয়া গেল।

বীথিবদ্ধ উদয়পদ্মের ছায়ায় প্রায় ফটকের পাশে চলে এসেছি, তখনই চোখে পড়ল সাদামাটা একটি ঝোপালো গাছে সাপের মাথার মতো কিছু একটা। কাছে গিয়ে দেখি কতগুলো ফুলের কলি। এমন অদ্ভুত দর্শন ফুলের কলি আগে কখনও দেখিনি। তারপর পাতার আড়ালে খুঁজে পেলাম কয়েকটি ফুটন্ত ফুলও। কলি দেখে বোঝার উপায় নেই, ফুলটি এত সুদর্শন হতে পারে। গাছটি পোর্টল্যান্ডিয়ার পাশে। ফুল একেবারেই অচেনা। এই গাছ কতবার যে দেখেছি, তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু এবারই প্রথম ফুলের দেখা পেলাম। বই-পুস্তক দেখে আমাদের দেশে গাছটির আর কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না। বাংলা নাম নেই। উদ্ভিদবিদ সরদার নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Rothmannia longiflora। বৃক্ষপ্রেমী জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় গাছটি কোন দেশ থেকে কীভাবে সংগ্রহ করেছিলেন সে সম্পর্কে এখন আর বিস্তারিত কিছু জানা যায় না।

এটি চিরসবুজ গুল্ম। সুযোগ পেলে ৯ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ডালপালা কিছুটা বিক্ষিপ্ত, দেখে লতানো মনে হতে পারে। পাতা বিপ্রতীপভাবে বিন্যস্ত, মসৃণ, ৩ মিমি. দীর্ঘ। ফুল একক, সুগন্ধি, পুষ্পবৃন্ত ১ সেমি. লম্বা হতে পারে, বৃতি টিউবের মতো, পাপড়ির ভেতর বেগুনি রঙের কারুকাজ। প্রস্টম্ফুটন মৌসুম গ্রীষ্ফ্ম-বর্ষা। ফল গোল বা উপবৃত্তাকার, সাড়ে ৩ থেকে ৭ সেমি. লম্বা, কালচে-সবুজ। ফল খাবার উপযোগী। অন্যান্য কাজেও ব্যবহূত হয়। গায়ে টেটো আঁকা বা হাতে নীলচে-কালো রঙের জন্য ফল কাজে লাগে। ফুল ও ফল প্রাকৃতিক রং তৈরিতে নানাভাবে ব্যবহার্য। সিয়েরালিওনে গাছের শিকড় বর্শা, কুঠার বা দাওয়ের হাতল তৈরিতে ব্যবহূত হয়। ঘানায় গাছের কচি ডাল চর্বণ বা তামাকের বিকল্প হিসেবে কাজে লাগানো হতো। এ গাছের কচি ডাল, বাকল ও শিকড়ের নির্যাস হাত ও গা-ধোয়ার লোশন হিসেবে ব্যবহূত হয়। নাইজেরিয়ায় গাছের শিকড় অন্ত্রের নানান সমস্যায় কাজে লাগে। কঙ্গো অঞ্চলে গলা বা কণ্ঠনালির লোকজ চিকিৎসায়ও শিকড় ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

সারাবিশ্বে এদের প্রায় ৩০ প্রজাতির গাছ দেখা যায়। তার মধ্যে ১৮ প্রজাতির বাস আফ্রিকার উষ্ণাঞ্চলে। আফ্রিকার মধ্যে বিশেষত, মাদাগাস্কার এবং এশিয়ায় এ গাছের বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়। সবকিছু মিলিয়ে এমন একটি কেজো গাছ বলধা গার্ডেনের সংগ্রহকে আরও সমৃদ্ধ করেছে, সন্দেহ নেই। আলঙ্কারিক হিসেবে আমাদের উদ্যানগুলোয় অনায়াসেই যুক্ত হতে পারে এই পুষ্পতরু।

বিষয় : বলধা গার্ডেন বিরল ফুল

মন্তব্য করুন