সাংবাদিকতায় বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ঢুকে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। 'খিচুড়ি রান্না শিখতে' কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বুধবার সচিবালয়ে ডাকা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

এদিকে, বুধবার বিকেলে পরিকল্পনা কমিশনের এক সভায় এই প্রকল্পের প্রস্তাবটি বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। সভায় বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রেখে কোনো প্রকল্পেই বিদেশ ভ্রমণ খাত রাখা হচ্ছে না।

এর আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'বেশ কিছুদিন আগে মিড-ডে মিল নীতি পাস হয়েছে। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। অথচ এ নিয়ে পত্রিকায় এই ধরনের একটি নিউজ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের একটি ভালো উদ্যোগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এটি একটি প্রস্তাব, এটি দেখার আরও উচ্চতর জায়গা আছে। প্ল্যানিং কমিশন দেখবে। এটা নিয়ে হৈ চৈ করার মতো কিছু নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'এর মধ্যে দেখি সামান্য ধারণা নিয়ে বিএনপির রিজভী আহমেদ নানা ধরনের কথা বলছেন। তারা দেখেননি, পড়েননি কিছু। তাদের এমন কোনো ইতিহাস নেই, জিয়াউর রহমানের নেই, খালেদা জিয়ার নেই, কেউ শিক্ষা নিয়ে এমন কাজ করেননি।'

সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'সবচেয়ে বড় কথা, আপনারা মাইন্ড করবেন না, বিএনপি-জামায়াতের লোকজন সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকে পড়েছে। তাদের কোনো জ্ঞান-গরিমা নেই। হুট করে একটা লেখা লিখে দিলেই মনে হয় হয়ে গেল! সরকারের ভাবমূর্তি কোথায় গেল না গেল- এরা তা দেখে না।'

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার দেওয়ার উদ্যোগটি শিশুদের ভালোর জন্যই নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এজন্য এবার যে প্রস্তাব দিয়েছি, এটি ১৯ হাজার ২৮২ কোটি টাকার প্রস্তাব। মিড ডে মিল কার্যক্রমটি আমরা ১৬ উপজেলায় পাইলটিং (পরীক্ষামূলকভাবে চালু) করেছি। আমরা বাচ্চাদের খিচুড়ি খাওয়াব। তিন দিন বিস্কুট খাওয়াব, তিন দিন রান্না করা খাবার খাওয়াবো। ডিম, কলা ইত্যাদি আমরা চিন্তাভাবনা করছি, যাতে বাচ্চাদের কিছুটা হলেও পুষ্টি দিতে পারি। সুন্দর স্বাস্থ্যবান শিশু না হলে পড়াশোনায়ও মনোযোগ দিতে পারে না।'

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আপনারা জীবনে প্রথম যখন সাংবাদিকতা শুরু করেছেন তখন কি সিনিয়রদের কাছে শেখেননি? অবশ্যই তাদের কাছ থেকে শিখতে হয়েছে। এটাও এমনই। ৫০ বছর আগে যারা মিড ডে মিল পদ্ধতি শুরু করেছে আমরা তাদের কাছেই শিখতে চাই। এটা কোনো খিচুড়ি রান্নার শিক্ষা নয়। এটা ম্যানেজমেন্টটা জানার জন্য, শেখার জন্য, কীভাবে করছে। এজন্য সামান্য কিছু টাকা ডিপিপিতে ধরা আছে।' 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষার সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন।

এদিকে, বুধবার এক সভায় 'খিচুড়ি রান্না শিখতে' কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের বিষয়টি বাতিল করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রেখে কোনো প্রকল্পেই বিদেশ ভ্রমণ খাত রাখা হচ্ছে না। 

প্রাইমারি স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় একটি প্রকল্পে বিদেশে গিয়ে ডিম-খিচুড়ি, সবজিসহ অন্যান্য খাবার রান্না ও প্রসেসিং শিখতে পাঁচ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। এছাড়া দেশে একই বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য আরও চাওয়া হয়েছিল ১০ কোটি টাকা। কমিশন পুরো বিষয়টিই বাতিল করতে বলেছে।

খিচুড়ি রান্না শেখার জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ভারত সফরে পাঠানোর প্রস্তাব করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। সংবাদটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা করে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় খিচুড়ি বিষয়ক প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়।

এ বিষয়ে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, 'কেউ আমাদের কাছে একটি আবদার করলেই হবে না। আমরা একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুশাসনের বাইরে যেতে পারবো না। বর্তমানে করোনা সংকট চলছে। কোনো প্রকল্পেই বিদেশ ভ্রমণের খাত রাখা হচ্ছে না। তাহলে এ প্রকল্পে সেটা কেন থাকবে?'