ছুটিতে দেশে এসে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীকর্মীরা কয়েক দিনের অনিশ্চিত অপেক্ষা ও সড়কে বিক্ষোভের পর কর্মস্থলে ফেরার উড়োজাহাজের টিকিট পেতে শুরু করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে অন্তত ৫০০ জনের হাতে উঠেছে সৌদি অ্যারাবিয়ান এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট। করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে তারা ৩০ সেপ্টেম্বরের আগেই কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন।
আগের দিন বুধবার এসেছে আকামার (কাজের অনুমতি) মেয়াদ ২৪ দিন বৃদ্ধির ঘোষণা। আশ্বাস মিলেছে ভিসার মেয়াদ এবং কর্মীদের কাজে ফেরার সময়সীমা (এক্সিট রি-এন্ট্রি) বৃদ্ধিরও। গতকাল নিশ্চিত হওয়া গেছে, বাংলাদেশ বিমান ও সৌদির ফ্লাইট সংখ্যা আরও বাড়বে। কিন্তু আকামা, ভিসা ও রি-এন্ট্রির সময়সীমা বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণা না আসায় যারা টিকিট পাননি, তারা এখনও কিছুটা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছে, ছুটি শেষে রোববার সৌদিতে অফিস-আদালত খোলার পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। তবে টিকিটের অপেক্ষায় থাকা কর্মীর বড় অংশই বলছে, তারা এখনও নিয়োগকারীর (কফিল) কাছ থেকে ছুটি শেষে কাজে ফেরার সময়সীমা বৃদ্ধির বার্তা পাননি।
করোনা মহামারির কারণে সৌদি থেকে দেশে ফেরা কর্মীদের আকামা ও রি-এন্ট্রির মেয়াদ তিন দফায় সাত মাস বাড়ানো হয়। তা শেষ হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। যারা গতকাল টিকিট পেয়েছেন, তাদের আর এ নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই। টিকিটের জন্য চার দিন সোনারগাঁও হোটেল চত্বরে সৌদি এয়ারলাইন্স কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকা গাজীপুরের আবদুল হক তাদের মধ্যে একজন। গতকাল দুপুরে টিকিট পেয়েছেন তিনি। জানালেন, অনিশ্চয়তার বোঝা মাথা থেকে নেমেছে। করোনার ফল নেগেটিভ এলে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরের ফ্লাইট ধরবেন তিনি। শনিবার করোনা পরীক্ষা করাবেন।
আবদুল হক জানান, গত ১২ ডিসেম্বর এক হাজার ৯০০ রিয়ালে ফিরতি টিকিট নিয়ে দেশে ফেরেন। চার মাসের ছুটি শেষে ৯ এপ্রিল তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় আটকে যান। তিন দফায় তার রি-এন্ট্রি ও আকামার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ে। কিন্তু টিকিট না পাওয়ায় অনিশ্চয়তায় ছিলেন। গতকাল আগের ভাড়াতেই ফিরতি টিকিট পেয়েছেন। বাড়তি টাকা দিতে হয়নি।
সৌদি এয়ারলাইন্সের ঢাকার বুকিং কার্যালয়ের ম্যানেজার জাহিদুল আবেদিন জানান, নতুন যাত্রীদের টিকিট দিচ্ছেন না। যারা ফিরতি টিকিট নিয়ে ফিরেছিলেন, তাদের টিকিট রি-ইস্যু করা হচ্ছে। বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না। ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদিয়ার ফ্লাইট চালু হলেও বিমানের উড়োজাহাজ সৌদিতে অবতরণের অনুমতি পায়নি শুরুতে।
অনুমতি পাওয়ার পর ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে দুটি ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। গতকাল জানিয়েছে, ফ্লাইট আরও বাড়বে। ১৬ ও ১৭ মার্চ জেদ্দা ও রিয়াদের বিমানের ফিরতি টিকিটধারী ছাড়াও ১৮ ও ২০ মার্চের জেদ্দা এবং ১৮ ও ১৯ মার্চের রিয়াদের ফ্লাইটের ফিরতি টিকিটধারীদের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর রিয়াদে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর জেদ্দায় উড়োজাহাজ যাবে। গতকাল ২৬ এবং ২৭ সেপ্টেম্বরের ফ্লাইটের যাত্রীদের মতিঝিলের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে টিকিট দিয়েছে বিমান। তাদের মধ্যে ২৬০ জন ২৬ সেপ্টেম্বর বিশেষ ফ্লাইটে জেদ্দা এবং এবং ৪১৯ জন ২৭ সেপ্টেম্বর রিয়াদ যাবেন।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোকাব্বির হোসেন বলেন, 'আগে আসলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে ফিরতি টিকিট রি-ইস্যু করা হবে। অন্য তারিখের ফিরতি টিকিটধারী যাত্রীরা ওই দু'দিনের টিকিট পাবেন না। তাদের অযথা ভিড় না করতে অনুরোধ জানিয়েছে বিমান।
কারওয়ান বাজারের সৌদিয়ার বিক্রয় কেন্দ্রে টিকিটের লম্বা লাইন ছিল গতকাল সন্ধ্যায়ও। যারা রোববার টোকেন নিয়েছেন শুধু তাদের টিকিট দেওয়া হয়েছে। হোটেলের বাইরের সড়কে তখনও টিকিটের জন্য ভিড় ছিল হাজারো প্রবাসীকর্মীর। তাদেরই একজন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মো. ওয়াহিদ জানান, আকামা ও ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা শুনে অনলাইনে যাচাই করেন। কিন্তু তার রি-এন্ট্রির মেয়াদ বাড়েনি। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফিরতে বলা হয়েছে। তিনি আশায় আছেন, ঘোষণা অনুযায়ী আকামা ও ভিসার মেয়াদ ২৪ দিন বাড়বে। নইলে কী হবে, তা ভাবতেও পারছেন না করোনায় ১০ মাস ধরে দেশে বেকার বসে থাকা মো. ওয়াহিদ।
তিনি জানান, কয়েক মাস ধরে ধারদেনা করে চলছেন। সরকারিভাবে মেয়াদ না বাড়লে তার পক্ষে ১০ হাজার রিয়াল খরচ করে আকামা নবায়ন সম্ভব নয়। তারপর রি-এন্ট্রির মেয়াদ প্রতি মাসে বাড়াতে আরও ১০০ রিয়াল করে গুনতে হবে। হাজারো কর্মীর মতো ওয়াহিদ আছেন মেয়াদ বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায়।

বিষয় : প্রবাসীকর্মীর হাতে অবশেষে স্বস্তির টিকিট

মন্তব্য করুন