- বাংলাদেশ
- তিনি হয়ে উঠেছিলেন সবার আস্থার জায়গা
অবসরে গেলেন সুপ্রিমকোর্ট বারের তত্ত্বাবধায়ক নিমেশ
তিনি হয়ে উঠেছিলেন সবার আস্থার জায়গা

নিমেশ চন্দ্র দাশ
নিমেশ চন্দ্র দাশ। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সবাই চেনেন নিমেশ বাবু নামে। ৪৪ বছর কাজ করেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে। তাকে ছাড়া যেন এক প্রকার অচল বার। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ছিলো এই কারিগরের শেষ কর্মদিবস। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে অবসরে গেলেন বারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট (তত্ত্বাবধায়ক) নিমেশ চন্দ্র দাশ।
বুধবার সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় সমিতির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন, সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, বারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
তারা বলেন, সুপ্রিমকোর্ট বারের যাত্রার প্রায় শুরু থেকেই সকলের আস্থার প্রতীক ছিলেন তিনি। নিমেশ দাশ একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ প্রশাসক। তাকে আইনজীবী সমিতির সবাই ভালোবেসে 'নিমেশ দা' বলেই ডাকতেন। আইনজীবীদের হ্নদয়ের মনিকোঠায় বেঁচে থাকবেন তিনি।
শেষ কর্মদিবসে বুধবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে তাকে আবেগঘন পরিবেশে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতো দীর্ঘ সময় কাজের অভিজ্ঞতা বারের আর কারও নেই। বিদায় বেলায় সহকর্মীদের বলে গেলেন বারের প্রতি যেন খেয়াল রাখেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের স্বন্নাগ্রামে জন্ম নেওয়া নিমেশ বাবু ১৯৭৬ সালে যখন সুপ্রিমকোর্ট বারে আসেন, তখন সেখানে ছিলো মাত্র ৪টি ফাইল। সেখানে এখন শত শত ফাইলের স্তুপ। অথচ সবকিছুই তার নখদর্পনে। মেধা, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে বারের গুরুত্বপুর্ণ নথি, ফাইল সমিতির স্বার্থে সংরক্ষণ করে রেখে গেছেন। ওই সময় বারের সদস্য ছিল ৪৯১ জন। বর্তমানে এর সংখ্যা প্রায় আট হাজার।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বেশিরভাগ বিচারপতিই সনদ নিয়েছেন তার হাতে। শেষবারের মতো কর্মস্থল ছাড়ার আগে গর্ব ভরে বললেন সেসব পুরানো কথা।
স্বাধীনতার পর এত দীর্ঘ সময় সুপ্রিমকোর্ট বারে কাজের অভিজ্ঞতা আর কারও নেই। তাই মায়ারটানও একটু বেশি। অবসরে যাওয়া নিমেশ চন্দ্র দাশ সমকালকে বলেন, সমিতির চাকরিবিধি অনুযায়ী আমি দীর্ঘ ৪৪ বছর এই সমিতিতে কাজ করেছি। স্বৈরশাসনের সময় অনেক প্রতিকুলতার সঙ্গে কঠিন দায়িত্ব পালন করেছি। সমিতিকে আপন মনে ভালবেসেছি। এতদিনে সমিতির প্রতিটি ইট-কণার সঙ্গে আমার স্মৃতিবিজড়িত আছে। এই সমিতিকে মনে করতাম আমার পরিবারের একটি অংশ। এই সমিতি আমার হদয়ে গেঁথে আছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন সভাপতি এবং ৩৫ জন সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের অনেকেই একাধিকবার দায়িত্বপালন করেছেন। সমিতি আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে, সম্মান করেছে, স্নেহ করেছে এবং ভালোবেসেছে।
৬৩ বছর বয়সী নিমেশ চন্দ্র বলেন, আইনজীবী সমিতি থেকে পাওয়া বেতন দিয়ে আমার ভাইবোন-ছেলেমেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘদিনের চাকরিজীবনের এই অঙ্গনের আলো-বাতাস এখন আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
মন্তব্য করুন