অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী আসির উদ্দিনের সাজার ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন অন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। তাদের অনেকে ইতোমধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তারের শঙ্কায় গা-ঢাকাও দিয়েছেন। অনেকে ঢিলেঢালা অফিস করছেন। সব মিলিয়ে বেবিচকের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
প্রায় তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বেবিচকের সাবেক কর্মকর্তা আসির উদ্দিনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি তার মালিকানাধীন ভবন বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম গত ২৫ অক্টোবর আসামির উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
সম্প্রতি বেবিচকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একটি তালিকা তৈরি করে সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরই মধ্যে দুদকের তালিকাভুক্ত দুর্নীতিবাজ প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর বেবিচকের জেনারেটর ক্রয়সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্তকৃত তত্ত্বাবধায়ক (সিভিল ডিভিশন) প্রকৌশলী শহীদুল আফ্রোজ, নির্বাহী (ইএম) মিহির চাঁদ দে, সহকারী (ইএম) প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্র রায়, সিনিয়র উপসহকারী (ইএম) প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম মণ্ডল, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের
(ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল) মালিক শাহাবউদ্দিন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাছান জহিরের বিরুদ্ধেও দুদকের মামলা রয়েছে। আদালতের নির্দেশে তারা বর্তমানে জামিনে আছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক (সিভিল ডিভিশন) প্রকৌশলী শহীদুল আফ্রোজ সমকালকে বলেন, দুদকের মামলায় দু'বছর ধরে তারা চাকরি থেকে বরখাস্ত রয়েছেন। এরই মধ্যে আদালত দুদকের মামলায় ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী আসির উদ্দিনকে। এ সংবাদে বেবিচেকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, বেবিচকের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও নানা অনিয়ম হচ্ছে প্রকৌশল বিভাগের ১১টি শাখায়। প্রতিটি প্রকল্প তৈরি ও প্রাক্কলন প্রণয়নের জন্য এ বিভাগে অবৈধ লেনদেন হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, প্রকৌশলী নুরুদ্দিন, আমিনুল হাসিব, উপপরিচালক (প্রশাসন) নুরুল ইসলাম, প্রকৌশলী জাকারিয়া, সুভাশিষ বড়ূয়া, আসালত হাসান খান, শাহীনুর আলম, আয়েশা হক, শফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।
এ ছাড়া বেবিচকের প্রশাসন, বদলি, পাস ও কেনাকাটা ক্রয় সেন্ট্রাল ইঞ্জিনিয়ারিং মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড স্টোর (সেমসু) শাখার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট-বাড়িসহ অবৈধ সম্পদ। দুদকের মামলা তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এ ব্যাপারে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মালেক কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি শতভাগ সমর্থন রয়েছে তাদের। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে বেবিচক সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তাদের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করতে হবে। বেবিচকে দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও যে কোনো আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তি বা সংস্থা এগিয়ে এলে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।


বিষয় : বেবিচকের দুর্নীতিবাজরা আতঙ্কে

মন্তব্য করুন