ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনে দায়িত্ব পালন

ডিসি ও ইউএনও কার্যালয়ের জন্য ২৬১ দামি গাড়ি কেনার অনুমোদন

ডিসি ও ইউএনও কার্যালয়ের জন্য ২৬১ দামি গাড়ি কেনার অনুমোদন

ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:০৫ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:০৫

আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় সংকোচনের নীতি ঘোষিত রয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি যানবাহন কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যেই জেলা প্রশাসক ও উপজেল নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জন্য ৩৮০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় ২৬১টি জিপ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কোনো দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এসব দামি গাড়ি কিনবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।

বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সাধারণত এ বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী নিজে কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। কিন্তু আজ কোনো ব্রিফ করা হয়নি।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বৈঠকে উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা; মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিবহন সেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য এসব গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখতে যেসব গাড়ির আয়ুষ্কাল ১৪ বছর বা তদূর্ধ্ব এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে তার প্রতিস্থাপক হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনা হবে। 

জানা গেছে, ৮৮ কোটি টাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য কেনা হবে ৬১ টি মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ। প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জন্য কেনা হবে ২০০টি একই গাড়ি কেনা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটির দাম একই ধরে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।  

মতামত জানতে চাইলে  ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, প্রশাসনের জন্য এ ধরনের কেনকাটা স্বাভাবিক সময়ে হলে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হতো না। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক থাকায় সরকার অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এ সময়ে নতুন গাড়ি কেনাকাটায় প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক।  সরকার যা প্রচার করছে তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে কি–না সেই প্রশ্ন উঠবে।  

তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রম কিংবা আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে কর্মকর্তাদের তোষণের মাত্রা বাড়াতে, যে কারণেই হোক এ ধরনের কেনাকাটার দায় কিন্তু পড়বে জনগণের উপর। চলমানা আর্থিক সংকটের কারণে ইতোমধ্যেই জনগণ নাভিশ্বস অবস্থায় রয়েছে। এ জন্যই সরকার বারবার কৃচ্ছ্রসাধন বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার যখন নিজেই এ নীতি প্রয়োগ করছে না, তখন সাধারণ জনগণকেই এর মূল্য দিতে হচ্ছে।  

গত ২ জুলাই  একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের গাড়ি কেনা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে পরিচালন বাজেটের আওতায়ও গাড়ি কেনা বন্ধ রাখতে বলা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ১০ বছরের অধিক পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করার সুযোগ রাখা হয়। 

গত জুলাইয়ের শেষ দিকে গাড়ি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত ব্যয়ের অনুমতি চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।চিঠিতে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের জন্য ৯৬টি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসের জন্য ৩৬৫টিসহ  মোট ৪৬১ গাড়ি কিনতে বাজেট বরাদ্দের অনুরোধ জানানো হয়। এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থ বিভাগ ২৬১ টি গাড়ি কেনার পরামর্শ দেয়।  

অন্যান্য প্রস্তাব: জিপ কেনা ছাড়া আরও ১৪টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পৃথক পাঁচটি প্রস্তাবের মাধ্যমে ১ লাখ ৪০ হাজার টন বিভিন্ন ধরনের সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক ইউরিয়া এবং কাফকো থেকে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া আমদানি করা হবে। এছাড়া সৌদি আরব থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি এবং মরক্কো থেকে ৬০  হাজার টন টিএসপি আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এসব সারে মোট ব্যয় হবে ৭৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

সভায় স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার টন মসুর ডাল কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে  মসুর ডাল কেনা হচ্ছে। প্রতি কেজি ১১১ টাকা ৮৫ পয়সা দরে এ ডাল সরবরাহ করবে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ।

আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১২ হাজার ৫০০ টন মসুর ডাল কেনার আরও একটি প্রস্তাবেও অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ৯৯ টাকা ৪৮ পয়সা দরে এ ডাল কেনা হবে ভার্জিনিয়ার অ্যাকসেচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন থেকে। এতে ব্যয় হবে ১১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। একই সঙ্গে টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রতি লিটার ১৫৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে ৭৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় বসুন্ধরা মাল্টি ফুডস প্রডাক্টস থেকে এ তেল কেনা হবে।

আরও পড়ুন