অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে বন্দি লক্ষ্মীপুরের এমপি মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কাজী সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন এই মামলা করেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য।

দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, এনআরবি কমার্শিয়ালসহ তিনটি ব্যাংকে পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের নামের পাঁচটি হিসাবে জমা হয় মোট ১৪৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও অনেকের ব্যাংক হিসাব থেকে পাঁচটি হিসাবে ওই পরিমাণ টাকা জমা করা হয়। পরে তা থেকে এরই মধ্যে ১৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, পাপুল, তার স্ত্রী ও তাদের মেয়ের ব্যাংক হিসাব থেকেও জেসমিন প্রধানের হিসাবগুলোতে টাকা জমা হয়েছে। পাপুলের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ নিজের, স্ত্রী ও মেয়ের হিসাবে জমা রাখা হয়েছিল। পরে ওই অর্থ শ্যালিকার হিসাবগুলোতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর শ্যালিকার হিসাব থেকে তা উত্তোলন করে বিদেশে হুন্ডি বা অন্য কোনো মাধ্যমে পাচার করা হয়। বিদেশে অর্থ পাচারে পাপুল কয়েকটি ধাপে স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করেছেন।

এনআরবি কমার্শিয়াল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ও সিটি ব্যাংকে জেসমিন প্রধানের পাঁচটি হিসাব থেকে ওই পরিমাণ টাকা পাচার বা আত্মসাতের পর এখন স্থিতির পরিমাণ যৎসামান্য।

দুদকের অনুসন্ধানে জেসমিন প্রধানের নামে দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার একটি এফডিআরের সন্ধান পাওয়া গেছে। জানা গেছে, জেসমিন তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। তাই তার বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৭(১) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা গেছে, পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে জমা করেন। ওইসব এফডিআরের বিপরীতে জেসমিন প্রধান ২৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। বিভিন্ন ব্যাংকে জেসমিন প্রধানের নিজ নামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে করা ব্যাংক হিসাবে ২০১২ সালের জুন থেকে চলতি বছরের ৭ জুন পর্যন্ত মোট ১৪৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা জমা হয়। পরে এসব হিসাব থেকে ১৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা পাচার বা আত্মসাৎ করা হয়।

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন কুয়েতের রাজধানী থেকে এমপি পাপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। রয়েছে নানা ব্যবসা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুয়েতে এমপি পাপুলের বিচার শুরু হয়।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। গ্রেপ্তারের পর ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় পাপুলকে।

কাজী পাপুল তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ ৫০ হাজার দিনার বা প্রায় এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা তিনি উপহার দিয়েছিলেন।

পাপুল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাক লাগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে জয়ী হন। ভোটের মাঠে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সমর্থন পান। নির্বাচনের পর আরেক চমক সৃষ্টি করে তার স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হন।