আমাদের দেশে যে কয়েক ধরনের কাঞ্চন ফুল দেখা যায়, তার মধ্যে দেবকাঞ্চন অন্যতম। হেমন্তের প্রায় বিবর্ণ প্রকৃতিতে এই ফুলের সৌন্দর্য প্রশ্নাতীত। ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব বড় শহরে এই ফুলের পরিকল্পিত বীথি থাকা প্রয়োজন। তাতে আমাদের চারপাশে হেমন্তের ফুলের দৈন্য কিছুটা হলেও কমবে। ঢাকায় রমনা পার্ক, শেরেবাংলা নগর, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিভিন্ন পার্ক-উদ্যান এবং পাহাড়ি এলাকায় দেবকাঞ্চন দেখা যায়। তবে বনে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো দেবকাঞ্চন সংখ্যায় অনেক কম। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে এই ফুল ফোটে। 

দেবকাঞ্চন, রক্তকাঞ্চন এবং সাদাকাঞ্চনের কাণ্ড ও পাতার গড়ন প্রায় একই, পার্থক্য শুধু ফুলে। এ কারণে ফুল না ফুটলে এদের আলাদা করা কঠিন। তবে অন্যান্য কাঞ্চন ফুলের মধ্যে তুলনামূলকভাবে রক্তকাঞ্চনই বেশি আকর্ষণীয়। কাঞ্চনের পাতা তার অনন্য বৈশিষ্ট্য। দুটি পাতা জোড়া দিলে দেখতে যেমন, পাতার শেষ প্রান্ত অবিকল সে রকম। এ কারণেই কাঞ্চনের বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশ দুই যমজ উদ্ভিদবিজ্ঞানীর নাম থেকে নেওয়া। তারা ষোড়শ শতকের বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ছিলেন।

দেবকাঞ্চন (Bauhinia purpurea) মাঝারি আকারের অর্ধচিরসবুজ গাছ, ৮ থেকে ১০ মিটার উঁচু, মাথা ছড়ানো। পাতা মাথার দিকে ২-বিভক্ত, লতির আগা চোখা ও ভোঁতা। ফুল ৬ থেকে ৮ সেন্টিমিটার চওড়া, সুগন্ধি, সাদা বা বেগুনি। কয়েকটি একত্রে একটি ডাঁটায়, ফোটে হেমন্তে, সারাগাছ ভরে। অসমান ও লম্বাটে পাঁচটি পাপড়ি, মুক্ত। শুঁটি ১০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা, শিমের মতো। বীজ ১২ থেকে ১৬টি। ফুল অবশিষ্ট থাকতে থাকতেই শিমের মতো চ্যাপ্টা ফল ধরে। ফলগুলো একসময় শুকিয়ে গিয়ে আপনাআপনিই ফেটে যায়। তখন বীজগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের শুস্ক অঞ্চলের অরণ্যভূমিতে এদের আদি আবাস। কাঞ্চনগাছের বাকল থেকে ট্যানিং, রং ও দড়ি তৈরি করা যায়। বীজ তেল সস্তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গাছের শিকড় বিষাক্ত এবং সর্পদংশনের প্রতিষেধক।