- বাংলাদেশ
- বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকের আর নেই
বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকের আর নেই

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব আলী যাকের আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৬।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আলী যাকেরের মরদেহ আজ বেলা ১১টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নেওয়া হবে। এরপর তার মরদেহ বনানী করবস্থানে দাফন করা হবে।
আলী যাকেরের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আরও শোক প্রকাশ করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ।
চার বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন আলী যাকের। চিকিৎসা হিসেবে নিয়মিত থেরাপি চলছিল তার। ছিল হার্টের সমস্যাও। গত সপ্তাহে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপরই তাকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে নেওয়া হয় সিসিইউতে। কিছুটা সুস্থ হলে গত শনিবার বাসায় নেওয়ার পর রোববার আবারও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার করোনা পরীক্ষা করানোর পর তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
আলী যাকের দেশের একজন গুণী ও বর্ষীয়ান অভিনেতা। ছোট পর্দায় অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চেও দাপুটে বিচরণ ছিল তার। মঞ্চে নুরুলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর চরিত্রে অভিনয় করে জয় করেছেন দর্শক হৃদয়। এছাড়াও ‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’র মতো দর্শকপ্রিয় টিভি নাটকেও দেখিয়েছেন নিজের অভিনয় কারিশমা। বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন। অভিনয় করেছেন বেশকিছু চলচ্চিত্রেও। আলী যাকের টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটকও লিখেছেন। নানা বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। তার প্রকাশিত বই- ‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’।
আলী যাকের ১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের ‘কবর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে যোগ দেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে। আমৃত্যু এই নাট্যদলেই ছিলেন তিনি।
আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ছিলেন। তিনি একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ছিলনে বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের ও মেয়ে শ্রেয়া সর্বজয়া।
মন্তব্য করুন