গণসমাবেশে আগত নারীরা- সমকাল 

নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা-ধর্ষণ, নির্যাতন ও বিচারহীনতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নারী সংগঠনের নেত্রীরা। তারা বলেছেন, মরেও নারীর শান্তি নেই। হাসপাতালের মর্গে গিয়েও শান্তি নেই। সেখানেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সমাজ যে কতটা বর্বর ও অমানবিক হয়ে উঠেছে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। এ অবস্থা রোধে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নারীনেত্রীরা।

গণসমাবেশে আগত নারীরা- সমকাল 

শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে অনুষ্ঠিত নারী গণসমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নারী সেলের আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে এবং সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, নারী সংহতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখতার, বিপ্লবী নারী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক আমেনা আক্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, সিপিবির জলি তালুকদার, আদিবাসী ইউনিয়নের রেবেকা সরেন প্রমুখ। সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

গণসমাবেশকে সামনে রেখে দুপুরের পর থেকে নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। বিকেল ৩টা থেকে সমাবেশস্থলে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। খণ্ড খণ্ড মিছিলে সেখানে জড়ো হওয়ার পর স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন সমবেতরা। পরে এক বর্ণাঢ্য মিছিল শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে কাঁটাবন, বাটা মোড় হয়ে আবার শাহবাগে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, কেউ ধর্ষক হয়ে জন্ম নেয় না। এই সমাজ ধর্ষক সৃষ্টি করে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সমাজের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ধর্ষকরা উৎসাহিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত দেশের এই অরাজক অবস্থা কারও কাঙ্ক্ষিত নয়। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। সারাদেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।

সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, সারাদেশে ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। একের পর এক ধর্ষণ-নিপীড়ন ঘটে চলছে। বর্বরতা ও বিভৎসতার দিক থেকে একটা ঘটনা আগেরটিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। ঘরে-বাইরে, পাহাড়ে-সমতলে, পথে- গণপরিবহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব স্থানেই নারী-শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কোনো পদক্ষেপই নির্যাতন-নিপীড়ন কমাতে পারছে না।

বক্তারা বলেন, দেশে চলছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতনের ১০০টি মামলার মধ্যে ৯৭টির কোনো বিচার হয় না। আদালত ধর্ষককে শাস্তি না দিয়ে ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। ক্ষমতা ও অর্থের দাপটে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। তাই নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার বিরুদ্ধে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সমাবেশে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এসব দাবিতে সারাদেশের জেলায় জেলায় মাসব্যাপী নারী সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ধর্ষণ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সব প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা; হাইকোর্টের নির্দেশানুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করা; সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা, সিডও সনদের ২ এবং ১৬-১ (গ) ধারা স্বাক্ষর করে সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলোপ করা।