- বাংলাদেশ
- শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠক আজ
শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠক আজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক বৃহস্পতিবার। ভার্চুয়াল এ বৈঠক শুরু হবে সকাল সাড়ে ১১টায়। চলবে প্রায় দেড় ঘণ্টা। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার, চিলাহাটি-হলদিয়া পথে রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনসহ মূলত আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির (কানেক্টিভিটি) প্রকল্পগুলোর ওপর জোর দেওয়া হবে বলে ঢাকা ও দিল্লির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে কভিড-১৯ সহযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ভারতীয় ঋণ চুক্তির প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন, বাণিজ্য এবং পানি সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বাধা দূর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব বড় ইস্যু আছে কিংবা সাধারণত যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়, সেগুলো তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে পানি সমস্যা ও সীমান্ত ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
'দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বেশকিছু প্রকল্প উদ্বোধন হতে পারে। চিলাহাটি-হলদিয়া রুটে ট্রেনলাইন উদ্বোধন করা হবে। এ রুটটি প্রায় ৫৫ বছর আগে চালু ছিল। কালের বিবর্তনে তা বন্ধ হয়ে যায়। সেটা নতুন করে চালু করা হচ্ছে' বলেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ভারতের কর্মকর্তারা দ্য হিন্দু পত্রিকাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে আলোচনা ও চুক্তির চূড়ান্ত তালিকায় কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি এবং 'উচ্চ প্রভাবযুক্ত (হাই ইমপ্যাক্ট)' অবকাঠামো প্রকল্পগুলো থাকবে। পাশাপাশি ভারত যেসব প্রকল্পে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ২০১৭ সালে, সেগুলো দেখভালের সম্ভাব্য পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে। ২০১৮ সালে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর পর্যন্ত যে 'মৈত্রী' পেট্রোলিয়াম লাইনের ব্যাপারে দুই দেশ সম্মত হয়েছিল, গত সপ্তাহে যার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে, তার অগ্রগতি নিয়ে কথা হবে।
এ ছাড়া ভারত ও ভুটানের বিদ্যুৎ নিয়ে উপ-আঞ্চলিক বৈদ্যুতিক গ্রিড প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ভারতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ভারতের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোদি সরকারের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করা হবে বৈঠকে। এ দুই ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে সামনে রেখে গত বছর ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভের পর সফরটি বাতিল হয়। এরপর চারজন মন্ত্রীর সফরও বাতিল হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব তাবলিগ জামাতের আড়াই হাজার সদস্যকে কালো তালিকাভুক্ত করা এবং গ্রেপ্তারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করেছিলেন। পরে আদালত তাদের মুক্তি দেন।
দিল্লির সূত্র আরও জানিয়েছে, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা ইস্যু, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করা এবং কভিড-১৯ সহযোগিতার বিষয়টি ভারতের দিক থেকে অগ্রাধিকার পাবে। এই মহামারিতে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিই কমবেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণের বাধাগুলো দূর করার ক্ষেত্রটি ভারত যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক্ক ও অশুল্ক্ক বাধা দূর করার বিষয়ে এবারের শীর্ষ বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে হওয়ার কারণে বৈঠকে আলোচ্যসূচির সব বিষয় আলোচিত নাও হতে পারে। যেগুলো আলোচনায় আসবে না, সেসব বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
দু'দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি নিরসন হলে দ্রুতই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে দু'দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে সুনির্দিষ্ট আলোচনাসহ সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হবে।
আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে তার ঢাকা সফর নিশ্চিত হতে পারে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক মানেই দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও এক ধাপ উচ্চতায় যাওয়ার জোরালো প্রত্যাশা তৈরি হওয়া। আশা করা যাচ্ছে, এবারের বৈঠক ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে হলেও দু'দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে ইতিহাসের মাইলফলক ঘোষণা আসবে।
'দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাধা দূর করার ব্যাপারে একটি ইতিবাচক ঘোষণা এলে সেটি হবে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি' বলেন অধ্যাপক দেলোয়ার।
মন্তব্য করুন