
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) জরুরি অনুমোদনের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, কাতারসহ কয়েকটি দেশে ফাইজার বায়োএনটেকের টিকার বিতরণ ও ব্যবহার শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পরীক্ষার ফলাফল আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে স্থানীয়ভাবে অনুমোদনের পর চীন, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকার ব্যবহার শুরু করেছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়ে শিগগিরই বাংলাদেশেরও অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।
একাধিক সূত্র বলছে, আগামী শুক্রবার বড়দিন সামনে রেখে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দিতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ওই অনুমোদন পেলেই টিকা পাবে বাংলাদেশও। তবে আগামী জানুয়ারির শেষ দিকে অথবা ফেব্রুয়ারি শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার সম্ভাব্য সময় ধরে এগোচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এজন্য ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের জন্য টিকা আমদানির বিষয় উন্মুক্ত করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। বেসরকারি আমদানির ক্ষেত্রে বেশকিছু শর্তারোপ করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, সরকারিভাবে টিকা সংগ্রহের সার্বিক প্রস্তুতি চলছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন পাওয়ার পরপরই তা বাংলাদেশ পাবে। তবে জনগণের প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও টিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে টিকা আমদানি করতে পারবে। তবে ওই টিকা অবশ্যই বিশ্বের স্বীকৃত সংস্থার অনুমোদিত হতে হবে।
যেমন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংশ্নিষ্ট সংস্থার অনুমোদন থাকতে হবে। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট কমিটি থেকে অনুমোদন নিয়ে ওই টিকা আমদানি করতে হবে। একই সঙ্গে ওই টিকা বিতরণের বিষয়েও সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সরকারিভাবে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা আনা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তিন কোটি ডোজ আনার পর তা বিতরণ করতে ছয় মাসের মতো সময় লাগবে। এরপর কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আসা ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ বিতরণ করতে আগামী বছর কেটে যাবে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচের জনগোষ্ঠীর টিকার প্রয়োজন হবে না। তাদের সংখ্যা ৪০ শতাংশের মতো। অর্থাৎ সাত কোটি মানুষের টিকার প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া প্রসূতিসহ কয়েকটি রোগে আক্রান্তদের টিকা দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থান করছে প্রায় এক কোটি মানুষ। সব মিলিয়ে আরও দেড় কোটি মানুষের টিকা লাগবে না। এর মধ্যে অনেকের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। এর পরও টিকার প্রয়োজন হলে সরকার তা বিবেচনা করবে বলে জানান তিনি।
সরকারি উদ্যোগে আসছে প্রায় ১০ কোটি টিকা: ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা প্রতিরোধী তিন কোটি টিকার বিষয়ে আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি মাসে ৫০ লাখ; ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে। জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে এই টিকা আসা শুরু হলে জুলাইয়ে গিয়ে তিন কোটি ডোজ পূর্ণ হবে। এই টিকা শেষ হওয়ার আগেই জুন মাসের মধ্যে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটির (কোভ্যাক্স) আওতায় আরও ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ। এ হিসাবে দেশে মোট ৯ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা আসার বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে। জনপ্রতি ২ ডোজ হিসাবে ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষকে এই টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। দরিদ্র দেশগুলোর জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চলতি বছরের এপ্রিলে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি বা কোভ্যাক্স নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিমেডিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই)। এই জোট আগামী বছরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশে ২০০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকা পাবে বাংলাদেশও। এই টিকার দাম পড়বে এক দশমিক ৬ থেকে ২ ডলার। আর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা দেশীয় বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে আমদানিতে ব্যয় পড়বে প্রতি ডোজ ৫ ডলার। টিকা কেনার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে ইতোমধ্যে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভাকে জানিয়েছেন, প্রথম দফায় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভারত থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আনার পর মে-জুনের মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় আরও ছয় কোটি ডোজ টিকা আসবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্ৃব্দতি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ জন্য তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হবে সেগুলো কীভাবে ডিসপোজাল করা হবে, সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে টিকা দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
সচিব বলেন, ইপিআইর টিকা নিয়ে যে ব্যাপক কার্যক্রম রয়েছে, করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেটিকে বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। প্রাইভেট সেক্টরকে ব্যবহার করা হতে পারে। যেহেতু সময় পর্যাপ্ত রয়েছে, সে কারণে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদি অন্য কেউ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন প্রস্তাব নিয়ে আসে, সরকার কাউকেই মানা করবে না। সরকারের কমিটি সেটি অনুমোদন করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাইনাস ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় করোনাভাইরাসের টিকা সংরক্ষণ করতে হবে। তৃণমূলে টিকা দেওয়ার স্ট্রাকচারই নেই। একমাত্র কোল্ডস্টোরেজে রাখা যাবে, তারপর যখন বের করবে, মাইনাস ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা টেকনিক্যাল কমিটি দেখবে। কমিটি যদি মনে করে, বিদ্যমান অবকাঠামোর মেজর কোনো পরিবর্তন না করে টিকা দেওয়া যায় বা হ্যাজার্ড হবে না, সেটা টেকনিক্যাল বিষয়। এখন পর্যন্ত মডার্না এবং ফাইজার দুটোর টিকাই মাইনাস ২৫ ডিগ্রি এবং আরেকটা মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একজন ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসের দুটি করে ডোজ নিতে হবে। সেই হিসাবে দুই দফায় পাওয়া ৯ কোটি ডোজ টিকা সাড়ে চার কোটি মানুষকে দেওয়া যাবে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ।
বেসরকারি উদ্যোগেও আসছে টিকা: বেসরকারি উদ্যোগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার ১০ লাখ ডোজ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, গার্মেন্ট, ব্যাংকিং খাতসহ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন। সর্বোপরি সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী এই টিকা বিতরণ করা হবে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ ডোজ টিকা আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরও চাহিদা থাকলে অথবা সরকারিভাবে বলা হলে আরও টিকা আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সরকারিভাবে ৫ ডলারে দিতে পারলেও বেসরকারিভাবে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে এটি কিনতে দাম পড়বে ৮ ডলার। বেসরকারিভাবে প্রতি ডোজের দাম পড়তে পারে ১ হাজার দুইশ টাকা। ওই টিকা দেশে আসার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদিত কোনো সেন্টারের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেক্সিমকো ফার্মার বাইরে আরও কয়েকটি দেশীয় ওষুধ কোম্পানি টিকা আনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে স্কয়ার, ইনসেপ্টা, গ্লোব বায়োটেক, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস উল্লেখযোগ্য।
বেসরকারি উদ্যোগে টিকা আনার বিষয়ে জানতে চাইলে কভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের বাইরে বাংলাদেশ কোনো টিকা গ্রহণ করবে না। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অনুমোদন পেলে তা বিতরণের জন্য সরকারিভাবে একটি খসড়া পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারিভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকা আনতে চাইলে তা নিয়েও পরিকল্পনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তা ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে হতে হবে।
টিকা নিয়ে জোরালো প্রস্তুতি: আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা পাওয়ার সম্ভাব্য সময় ধরে এগুচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ জন্য ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। টিকা এলে শুরুতে কারা পাবেন এখন তা নির্ধারণের কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে মাইক্রো পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ এসেছে। একই সঙ্গে টিকা বিতরণের লক্ষ্যে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। টিকা দেশে আসার পর তা পরিবহন, মাঠপর্যায়ে সংরক্ষণ ও বণ্টনের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্যও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে টিকা-সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিয়ে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে টিকা বিতরণের জন্য বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, টিকা-সংক্রান্ত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ওই বৈঠকে সংশ্নিষ্ট সব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে সার্বিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কোন বিভাগ কী কাজ করবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আইসিটি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখাকে একটি ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়। টিকাদানের ক্ষেত্রে নাম নিবন্ধনসহ সব ধরনের তথ্য এই ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকবে। বিশেষ করে টিকা গ্রহীতার বিস্তারিত পরিচয় ও তথ্য এতে পাওয়া যাবে। কারণ একজন ব্যক্তি দুই ডোজ করে টিকা পাবেন। সে ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ দেওয়া পর নির্দিষ্ট সময়ে যাতে ওই ব্যক্তি দ্বিতীয় ডোজ পান তা নিশ্চিত করা হবে, যাতে কেউ বাদ না পড়েন তাও দেখা হবে। একই সঙ্গে টিকা গ্রহণের পর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তাও প্রস্তুতিতে রাখা হয়েছে। টিকা দেশে আসার পর তা পরিবহন কারা করবেন, নিরাপত্তার বিষয় কী হবে এবং ওই টিকা কীভাবে সংরক্ষণ ও বিতরণ করা হবে- তার রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সূত্রে জানা গেছে, কভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে কভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে টিকা ব্যবস্থাপনা ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নেতৃত্বে টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিকা-সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। সদস্য সচিব সিভিল সার্জন এবং কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন জেলা সদর আসনের এমপি। উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সদস্য সচিব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা এবং উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
চার ধাপে হবে টিকা বিতরণ: জাতীয়ভাবে কভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা বিষয়ে প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ওই খসড়া পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, চার ধাপে টিকা বিতরণ করা হবে। প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ অর্থাৎ ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবেন। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকা পাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম সমকালকে বলেন, টিকা বিতরণের জন্য মাইক্রো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। টিকা আসার পর শুরুতেই চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। কিন্তু তাদের সবাইকে এক দিনে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য কোন ১০০ জন অগ্রাধিকার পাবেন তা নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী ঝুঁকিপূর্ণ ১০০ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রথমে টিকা পাবেন। এর পর ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে অন্যারা পাবেন। এটিই মাইক্রো পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে শুরু করে সব খাতে বিবেচ্য হবে। রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশে মাইক্রো পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকা কর্মসূচি চলবে বলে জানান তিনি।
টিকার মূল্য নিয়ে গুজব: টিকার দাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গুজব ছড়াচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, ইউরাপ ও আমেরিকার চেয়েও বেশি দামে ভ্যাকসিন কিনবে বাংলাদেশ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিক্রি হবে ২ দশমিক ১৮ ডলার। আমেরিকা কিনবে চার ডলারে। অথচ বাংলাদেশ প্রতি ডোজ কিনবে পাঁচ ডলারে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। গত শনিবার ভারতের পত্রিকা দ্য হিন্দুর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন ভারতে প্রতি ডোজ বিক্রি হবে এক হাজার রুপি করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক জানান, অক্সফোর্ডের টিকার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সুতরাং তাদের জন্য কম মূল্য ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ টিকা উৎপাদনের শুরুতে কোনো বিনিয়োগ করেনি। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করার পরও তাদের প্রতি ডোজ এক হাজার রুপি করে কিনতে হবে। ভারতের তুলনায় আমরা কম দামে টিকা পাব।
মন্তব্য করুন