রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফল বিপর্যয়ের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিভাগের শিক্ষাথীরা। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনের আমতলায় এ সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। সম্মেলনকারীরা সকলেই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, পক্ষাপাতিত্ব, দায়িত্বে অবহেলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করা, তার কথামতো না চলায় মাস্টার্সের পরীক্ষায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফল খারাপ করে দেওয়ারও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও সভাপতি তার পছন্দের শিক্ষকদের দিয়ে খাতা দেখিয়ে তার ইচ্ছেমতো নম্বর দিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, বি.এস.এস (সম্মান) ২০১৮ পরীক্ষায় ২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১ জন ৩.৫০ বা তার বেশি সিজিপিএ অর্জন করেন। কিন্তু এম.এস.এস-২০১৯ পরীক্ষায় সিজিপিএ-৩.৫০ এর বেশি পেয়েছেন তিনজন। এদের মধ্যে একজন স্নাতকে ৩.৩০ পেয়ে ২১তম অবস্থানে থাকলেও এবার মাস্টার্সে তিনি প্রথম হয়েছেন। মাস্টার্সে ৩.৫০ এর উপরে পাওয়া সকলেই সভাপতির ঘনিষ্ট বলে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন।

শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন তার চারটি কোর্সে কোনো ইনকোর্স পরীক্ষা না নিয়েই ফল দিয়েছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিধিতে রয়েছে প্রতিটি কোর্সের ২০ শতাংশ নম্বর দেওয়া হবে দুইটি ইনকোর্স পরীক্ষা নিয়ে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সভাপতির কোর্সগুলোতে তাদের ফল খারাপ হয়েছে।

এ সময় শিক্ষার্থী মোস্তাকিম খান বলেন, ‘আমি অনার্সে ৩.৮২ সিজিপিএ পেয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে প্রথম হই। অনুষদের ডিনস অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীতও হয়েছি। আমি অনার্সের একটি বর্ষে সিজিপিএ- ৩.৯৭ ও পেয়েছি। কিন্তু মাস্টার্সে আমি ৩.৪৬ পেয়ে ৪র্থ হয়েছি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, অনার্সের চেয়ে মাস্টার্সে খারাপ পরীক্ষা দেইনি। এটা সভাপতির আক্রোশের কারনে এমনটি হয়েছে।’

সুলতান কবীর নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনার্সে সিজিপিএ- ৩.৭৬ পেয়ে বিভাগের দ্বিতীয় হই। এজন্য বিশ্ব বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছি। কিন্তু মাস্টার্সে সিজিপিএ- ৩.২৮ পেয়ে ১৬তম হয়েছি। আমি তো এতটা খারাপ পরীক্ষা দেইনি। সভাপতির সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন আছে; সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের জোর করা হতো। আমরা যাইনি, সেজন্য তিনি আক্রোশে ফল খারাপ করে দিয়েছেন। মাস্টার্সে যারা ৩.৫০ এর বেশি পেয়েছে তারা সবাই সভাপতির ঘনিষ্ঠ শিক্ষার্থী।’

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর একই অভিযোগ এনে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষার্থীরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘সবকিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে। এখানে আইনের ব্যত্যয় কিছুই হয়নি। প্রতিটি খাতা দু’জন পরীক্ষক দেখেছেন। তারা যে নম্বর দিয়েছেন সেই অনুযায়ী ফল হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হাসান, প্রশ্নোত্তর পর্বের জবাব দেন মাহমুদুল হাসান। এতে ১০/১২জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।