বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু। শুধু ঐতিহাসিক ও সংস্কৃতিগত নয়- দুই দেশের সম্পর্ক রক্তের। এই সম্পর্ক আজীবন অটুট থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বতন্ত্র পরিচয়ের ভিত্তিতে উঠে দাঁড়ানো এ দেশের জনগণকে আমরা গভীর প্রশংসা ও সম্মান জানাই। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ সারা বিশ্বের অনুপ্রেরণা।

মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে জীবন উৎসর্গকারী অর্ধশতাধিক মুক্তিবাহিনীর সদস্য ও ভারতীয় সৈনিকের আত্মত্যাগের স্মৃতিরক্ষায় সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে নির্মিত 'মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র' ভাস্কর্যের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাইকমিশনার এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবাও পাইলট হিসেবে অংশ নিয়েছেন। তাই আমি নিজেও গর্ববোধ করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনারা এখানে একসঙ্গে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আমি গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাই সীতাকুণ্ড উপজেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সেনাদের।

মঙ্গলবার ও সোমবার ভারতীয় হাইকমিশনার চট্টগ্রামে ব্যস্ত সময় কাটান। এ সময় তিনি সীতাকুণ্ডে ভাস্কর্য উদ্বোধনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরও পরিদর্শন করেন।

সীতাকুণ্ডে 'মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র' উদ্বোধন করে ফলক উন্মোচন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন, মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, ভারতীয় হাইকমিশনারের স্ত্রী সংগীতা দোরাইস্বামী, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সেকেন্ড অফিসার দীপ্তি আলংঘাট, চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলসাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লা আল বাকের ভূঁইয়া প্রমুখ।

এ সময় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরঞ্জীব হবে উল্লেখ করে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পথিকৃৎ। যারা এ দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চায় তারা সফল হবে না।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কুমিরায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা গুলি চালালে বিজয়ের উল্লাসে বিভোর মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্রবাহিনীর অসংখ্য সদস্য শহীদ হন। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর শহীদদের লাশ উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে গজারিয়া দিঘির পাড়ে দাফন করা হয়। মিত্রবাহিনীর আত্মদানের এই স্মৃতি ধরে রাখতে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থের সীতা দেবীর কুণ্ডের ওপর হনুমান মন্দিরের সামনে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে ভাস্কর্য 'মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র'।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন :বন্দর পরিদর্শনকালে ভারতীয় হাইকমিশনার বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গতকাল বন্দর ভবনে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময়ে অংশ নেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।\হএ সময় হাইকমিশনার বন্দরের কয়েকটি স্থাপনা ঘুরে দেখেন। মতবিনিময়কালে তারা বন্দর সম্প্রসারণে গৃহীত প্রকল্প ছাড়াও ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।

মাইজভান্ডার দরবার শরিফ পরিদর্শন: সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার দরবার শরিফ পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন ধর্মীয়, সুশীল ও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।

দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার বলেন, রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই আন্তঃদেশীয় সংযোগ দুই দেশের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। বিশেষ করে ত্রিপুরা, আসামসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধার ক্ষেত্র তৈরি হবে। ফটিকছড়িও সে সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, স্থলবন্দর পয়েন্ট থেকে সোনাইপুল, কালাপানিয়া, সেমুতং, বাটনাতলী, গাড়িটানা হয়ে ফটিকছড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।

তরীকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারীর সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও ফটিকছড়ির সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আবু তৈয়ব, সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদুল আরেফিন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রিফাত আক্তার নিশু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাটহাজারী সার্কেল আবদুল্লাহ আল মাসুম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালামত উল্লাহ চৌধুরী শাহীন প্রমুখ।