ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী
মেট্রোরেল লাইন-৬ এর উদ্বোধন শেষে শনিবার রাজধানীর আরামবাগে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ফোকাস বাংলা
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:১২ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১২
দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য ঢাকাসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা দিতে, দেশের উন্নয়ন করতে। তাই সবাইকে আহ্বান জানাব– নৌকা মার্কায় যাকেই প্রার্থী করব, তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। এবার নৌকা জিতবেই।
আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, জ্বালাও-পোড়াও এটাই বিএনপির উৎসব, এটাই তাদের চরিত্র। তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করা। ওরা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের সম্পদ ধ্বংস করতে পারে। এই ধ্বংসযজ্ঞ তাদের বন্ধ করতে হবে। না হলে কীভাবে এটা বন্ধ করতে হয়, সেটা আমাদের জানা আছে। সাবধান করে দিচ্ছি, ধ্বংসযজ্ঞ চালালে আমরাও ছাড়ব না।
গতকাল শনিবার রাজধানীর আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি-লুটপাট, সন্ত্রাস আর দেশকে ধ্বংস করে। এই ধ্বংস আর যাতে করতে না পারে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বিএনপি-জামায়াত যেন দেশের মানুষকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারতে না পারে, অত্যাচার করতে না পারে, তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপি-জামায়াত ভোট চোর, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি। তাদের স্থান বাংলার মাটিতে নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শ্রমিক অসন্তোষ ও আন্দোলনের জন্য সরকারবিরোধীদের উস্কানিকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মজুরি কমিশন বসেছে। শ্রমিকদের ধৈর্য ধরতে হবে। কারা উস্কানি দিচ্ছে, সেটাও আমরা জানি। যারা ভাঙচুরে জড়িত, বিএনপির নেতাকর্মীকে বলব, হুকুমদাতা দেশেই থাকুক আর বিদেশেই থাকুক, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, আর সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ গ্রহণ করে যিনি হুকুমজারি করেন, বিদেশ থেকে দেশে ধরে এনে শাস্তি দেব। কেউ ছাড় পাবে না।
রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে ঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী সমবেত হন। দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরুর ঘোষণা থাকলেও সকাল থেকেই রংবেরঙের পোশাক ও টি-শার্ট পরিহিত এসব নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন, জাতীয়, দলীয় পতাকাসহ মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। দুপুরের মধ্যেই উপচে পড়া নেতাকর্মীর ভিড় আরামবাগের সমাবেশস্থলের চারদিকে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে একদিকে মতিঝিল শাপলা চত্বর এবং অন্যদিকে রাজারবাগ, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, পুরানা পল্টনসহ আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়। এ অবস্থায় মতিঝিলে মেট্রোরেল প্রান্তে উদ্বোধন ও নামফলক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বিকেল পৌনে ৪টায় সমাবেশ মঞ্চে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশের নামে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও পুলিশ হত্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই কি রাজনীতি? ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালেও তারা ২৯ জন পুলিশকে হত্যা করেছে। রাজশাহীতে মাটিতে ফেলে তারা পুলিশ হত্যা করেছিল, সেটাও স্মরণ রাখা দরকার। আমি নেতাকর্মী ও ঢাকার মানুষকে বলব, যারা আগুন দিতে আসবে, ওই আগুনে তাদের ফেলে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে।
আগামী নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ আর দেশের জনগণ। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কিন্তু জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ চার চারবার ক্ষমতায় এসেছে। আগামীতেও ক্ষমতায় আসবে, জনগণের সেবা করবে।
ঢাকাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের তপশিল যে কোনো সময় ঘোষণা হবে। সে কথাটা মনে রেখে আগামী নির্বাচনে যাকেই প্রার্থী করি, সেটা কানা-খোঁড়া যেই হোক, তাকে নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। করবেন কিনা হাত তুলে ওয়াদা করেন। এ সময় উপস্থিত জনতা হাত নেড়ে সমর্থন জানালে শেখ হাসিনা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, এবার জিতবে নৌকা’ স্লোগান দেন। নির্বাচনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অন্যের কথায় নেচে কারখানায় হামলা করে, কারখানা ভাঙচুর করে এবং সেখানে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের ক্ষতি করলে নিজেরই ক্ষতি হবে। আর কারখানা বন্ধ হলে গ্রামে ফিরে যেতে হবে। বিনা কাজে জীবনযাপন করতে হবে। যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজি দেয়, শ্রম দিয়ে পয়সা কামাই করেন, সেই কারখানা ভাঙচুর করলে আল্লাহও নারাজ হবেন। আপনাদের যা প্রয়োজন হয়, অসুবিধা হয়, আমরা দেখি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি এবং তাদের কল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
মেট্রোরেলকে ঢাকাবাসীর জন্য সরকারের উপহার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলে চড়ে আমি এই মতিঝিলের সমাবেশে এলাম, যা ঢাকাবাসীর জন্য উপহার। পানি ও বিদ্যুতের সংকট দূর করাসহ ঢাকার উন্নয়নে সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে মেট্রোরেল ব্যবহারে যত্নবান, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতন হওয়ার জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ। যৌথভাবে সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির এবং ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।