ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড

বিটিভির চার কর্মকর্তা হত্যা মামলা ঝুলছে

লোগো

 আবু সালেহ রনি

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:৫৭ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:৫৭

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর হত্যা করা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) চার কর্মকর্তাকে। ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি ৪৮ বছরেও। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে এই মামলার বিচারকাজ ব্যাহত হয় দফায় দফায়। টানা ১৩ বছর স্থগিত থাকার পর গত ফেব্রুয়ারিতে আবার বিচারকাজ শুরু হলেও সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না। মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে মাত্র একজনের। 

রামপুরা টেলিভিশন ভবনে হত্যার শিকার ওই চার কর্মকর্তা হলেন– টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্রের অন্যতম স্থপতি, পাক্ষিক বিচিত্রার সম্পাদক ও বিটিভির তৎকালীন উপমহাপরিচালক মনিরুল আলম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবি সিদ্দিক, প্রধান হিসাবরক্ষক আকমল খান ও চিত্রগ্রাহক ফিরোজ কাইয়ুম চৌধুরী।

মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিচারে ধীরগতির সুযোগ নিচ্ছেন আসামিরা। চার্জশিটভুক্ত ৯ আসামির মধ্যে এরই মধ্যে দু’জন মারা গেছেন। চারজন দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। আর তিন আসামি মূল মামলা নিষ্পত্তির আগেই উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকা প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল বিন আতিকের আদালতে বিচারাধীন। আগামী ৩০ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। 

প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার দুলাল সমকালকে বলেন, ‘১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে মামলার বিচারকাজ এগোয়নি। এক পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণেও মামলাটি জটে পড়ে। এক যুগ পর গত বছর মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলেও সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না।’ তিনি জানান, পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি সাক্ষীদের আদালতে হাজির হতে সমন দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর বিটিভি ভবনসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ওই সময় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছিল বিটিভির কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। এ নিয়ে বিটিভি কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারী সমিতির মধ্যে গোপন বৈঠক হয়। উদ্দেশ্য ছিল, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে অনৈতিকভাবে সুবিধা নেওয়া। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও তাদের আঁতাত হয়। এর পর ৭ নভেম্বর অপহরণ করা হয় এ এম এম সিদ্দিকসহ চার কর্মকর্তাকে। পরে আর তাদের খোঁজ মেলেনি। পরের বছর হাতিরঝিলে পানি শুকিয়ে গেলে তিনটি কঙ্কাল পাওয়া যায়। কঙ্কালগুলো পরীক্ষা করে জানা যায়, সেগুলো বিটিভির নিখোঁজ তিন কর্মকর্তার। আজিমপুর কবরস্থানে কঙ্কালগুলো দাফন করা হয়। তবে মনিরুলের লাশ বা তাঁর কোনো চিহ্ন পায়নি পরিবার। 

এ ঘটনায় চার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে অপহরণ মামলা হয়, যা পরে হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য শুরুর পর ২০০৪ সালের ২৬ মে এক আবেদনে মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। মামলার তিন আসামি একইভাবে পৃথক আবেদন করে দফায় দফায় বিচারকাজে স্থগিতাদেশ নেন। সবেশষ ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এর মধ্যে তিন আসামি হাইকোর্ট থেকে অব্যাহতি পান। গত বছর মামলার বিচারকাজের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। একই বছরের ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলে ফের বিচারকাজ শুরু হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় বিচার চলতে আর বাধা নেই।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ তদন্তের পর মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফজলুল করিম খান ১৯৯৯ সালের ১৮ আগস্ট ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারও করে। তবে পরে তারা জামিনে মুক্ত হন। ২০০২ সালের ৭ আগস্ট মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। পরের বছর ১৬ আগস্ট ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এর পরের বছর ১৯ মে নিহত মনিরুল আলমের নিকটাত্মীয় মুহাম্মদ আলী স্বপনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এর পর আর কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।

অভিযোগপত্রভুক্ত পলাতক আসামিরা হলেন বিটিভির অধিবেশন নিয়ন্ত্রক সৈয়দ আইনুল কবির, ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সদস্য কে এ এম জাকারিয়া হায়দার ও শাহজাহান সিরাজী। অন্যদের মধ্যে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অনারারি লেফটেন্যান্ট আলতাফ হোসেন জামিনে এবং তিন আসামি হাইকোর্ট থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। 

আরও পড়ুন