ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পড়াশোনা লাটে

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পড়াশোনা লাটে

.

 সাব্বির নেওয়াজ

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:০০

শিক্ষাবর্ষ শেষের পথে। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে স্কুলে স্কুলে বার্ষিক-মূল্যায়ন পরীক্ষা। এই সময়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো গমগম করার কথা থাকলেও দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। যেখানে ভরপুর ছাত্রছাত্রীর কারণে পাঠদানে বেগ পেতে হতো শিক্ষকদের, সেখানে খাঁখাঁ করছে ক্যাম্পাসগুলো। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিরোধী দলগুলোর সহিংস কর্মসূচি এবং রাজপথ দখলে রাখতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর মহড়ার কারণে তৈরি হয়েছে এই পরিস্থিতি। এতে বছরের শেষ সময়ে এসে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটায় যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তবে এভাবে চলতে থাকলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিদ্যালয় চালু রাখার চিন্তা করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, আগামী ১৫ নভেম্বর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কর্মদিবসগুলোয় টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উদ্বেগ তৈরি হয়েছে পরীক্ষা আয়োজন নিয়েও। একই অবস্থা উচ্চশিক্ষায়ও। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হরতাল-অবরোধের মধ্যে করোনাকালের মতো অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে। তবে পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তাদেরও। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার আবারও সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সড়ক, রেল ও নৌপথে এ কর্মসূচি পালন করবে দলগুলোর নেতাকর্মীরা। গতকাল সকালে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, হাতেগোনা কয়েক শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। অবরোধে নিরাপত্তাহীনতায় বাকিরা বিদ্যালয়ে আসেনি। এ প্রতিষ্ঠানের মতিঝিল প্রধান ক্যাম্পাসে গিয়েও অনুরূপ চিত্র দেখা যায়। পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়, তাদের ক্লাসে ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী। হরতাল-অবরোধে গড়ে উপস্থিত থাকছে ১৪ জনের মতো।

কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুপুরে স্বল্পসংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র শিক্ষক তারিকুল আজম খান জানান, তাদের শিক্ষার্থী প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে প্রভাতি শাখায় সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার শিক্ষার্থী। বাকিরা দিবা শাখায়। গতকাল প্রভাতি শাখায় সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ শিক্ষার্থী এসেছিল। এমন ক্লাস গুরুত্বহীন।

ছাত্রীদের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী উপস্থিতি আরও কম। প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা– তিনটি শাখার মধ্যে বসুন্ধরায় উপস্থিতি মোটামুটি। সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ওবাইদুল্লাহ বলেন, অর্ধেকের কম শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে, বাকিরা আসছে না।

বেশ কিছু বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়ায় বন্ধ থাকছে পাঠদান। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গল্প করে সময় কাটান। কোথাও ক্লাস হলেও উপস্থিতি নগণ্য। তবে পাড়া-মহল্লার কিছু বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি ও শ্রেণি কার্যক্রম স্বাভাবিক দেখা গেছে।

অভিভাবকরা বলছেন, ক্লাস হওয়া না হওয়ার চেয়েও বড় শঙ্কা আসন্ন বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন। সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর মহড়ার কারণে ছেলেমেয়েরা বাইরে বের হতেই ভয় পায়। প্রতিদিনই জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে। এর মধ্যে সন্তানদের কীভাবে রাস্তায় ছাড়তে পারি। কিন্তু পড়াশোনাতো বন্ধ রাখা যাবে না। স্কুলে যেতে না পারায় পড়ার চাপ থাকছে না। তাই পড়ালেখায় মনোযোগও দিচ্ছে না ছেলেমেয়েরা। এ অবস্থায় আমরা আছি উভয় সংকটে।

মাউশি থেকে জানা গেছে, দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী প্রায় ৩ কোটি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে এ বছর বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলতি নভেম্বর 
মাসেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বছর নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হবে ৯ নভেম্বর। এ ছাড়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে ১৫ নভেম্বর। চলতি মাসেই শেষ করতে হবে মূল্যায়ন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলছেন, চলমান সরকারবিরোধী টানা কর্মসূচির কারণে বিদ্যালয়ে ও শিক্ষার্থীদের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে এসে যেখানে পড়াশোনা জোরদার হওয়ার কথা, সেখানে বন্ধ রাখতে হচ্ছে পাঠদান। এতে বার্ষিক পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মাউশির মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তারা জানান, সরকারবিরোধী কর্মসূচিগুলো যদি শুধু কর্মদিবসে পালন করা হয়, তাহলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন তথা শুক্র ও শনিবার মূল্যায়ন পরীক্ষাগুলো নেওয়া যায় কিনা, সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, পরীক্ষা, পড়াশোনা, মূল্যায়ন– এগুলো শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনা করে।

আরও পড়ুন