ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ককটেল, পাইপ বোমায় গান পাউডারের ‘গন্ধ’

ককটেল, পাইপ বোমায়  গান পাউডারের ‘গন্ধ’

ককটেল

 সাহাদাত হোসেন পরশ

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:৪৭ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ১২:৫৯

বিএনপির অবরোধ ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। নিক্ষেপ করা হচ্ছে হাতবোমা (ককটেল)। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ভবনের ওয়াশরুম থেকে জব্দ করা হয় দুটি ককটেল। ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিএনপির দুই দফার অবরোধে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ১০০টির মতো ককটেল উদ্ধার করে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল। ৫০টি ফোনকলে সাড়া দিয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতবোমা নিষ্ক্রিয় করে। আবার কোথাও পুলিশ পৌঁছার আগে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে যায়। জব্দ এসব ককটেলের আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গান পাউডারের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বোমা বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া পাইপ বোমা জব্দের ঘটনাও তাদের ভাবাচ্ছে। কারণ, অতীতে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পাইপ বোমার ব্যবহার দেখা যায়নি। এদিকে সীমান্ত এলাকাতেও গান পাউডারের চালান ধরা পড়ছে। বিজিবি সদস্যরা কয়েকটি চালান জব্দও করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রধান রহমত উল্লাহ চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘সম্প্রতি জব্দ বেশ কিছু ককটেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গান পাউডারের অস্তিত্ব মিলেছে। এছাড়া অবরোধ কর্মসূচিতে পাইপ বোমাও ছোড়া হচ্ছে। ককটেলে গান পাউডারের উপস্থিতি এবং পাইপ বোমার ব্যবহার আমাদের চিন্তায় ফেলছে। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়ানোর অপচেষ্টা থেকে এ ধরনের রাসায়নিক তারা ব্যবহার করতে পারে। এসবের পেছনে যারা রয়েছে, তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, সাধারণত ককটেল দুটি রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। অতীতেও বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জব্দ ককটেলে ওই দুই উপাদানই পাওয়া যেত। এবার দেখলাম, ককটেলের ভেতরে গান পাউডারের মিশ্রণ। গান পাউডারযুক্ত ককটেল ছুড়লে বিকট বিস্ফোরণ ও আগুনের বিস্তৃতি বেশি হয়, নাশকতার সঙ্গে জড়িতরা হয়তো এটিই চাচ্ছে।

পুলিশ সূত্র থেকে জানা গেছে, অবরোধের প্রথম দিন ৩১ অক্টোবর বনানীর আমতলী এলাকায় বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকে খবর দেওয়া হয়। বনানীতে পৌঁছে তারা একটি অবিস্ফোরিত পাইপ বোমা উদ্ধার করে। পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অবরোধের প্রথম দিন বনানী এলাকায় হাতবোমার বিস্ফোরণের পর নিষ্ক্রিয়করণ দল এসে আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল।

২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশ হত্যা, গাড়িতে আগুন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় ঢাকায় শতাধিক মামলা হয়। এরপর দেশজুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে পুলিশ-র‍্যাব। সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। মহাসমাবেশ ছাড়াও তিন দফায় হরতাল-অবরোধে শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দলটি দাবি করে আসছে, আগুনের ঘটনায় তাদের নেতাকর্মী জড়িত নয়। পুলিশের ভাষ্য, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আগুন দেওয়ার ঘটনায় যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তারা বিএনপি নেতাকর্মী। কয়েকটি জায়গায় চালক-হেলপাররা হাতেনাতে অগ্নিসংযোগকারীদের ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, গান পাউডার সংগ্রহ করে বিস্ফোরক জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করছে এমন একাধিক গ্রুপকে শনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, শুক্রবার পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে ৮ কেজি গান পাউডার, ২১টি হাতবোমাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন– যুবদলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সাইদুল হাসান মিন্টু, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল নেতা বাশার ও চকবাজার থানা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাসুদ। তাদের কাছে অ্যাকুয়ারিয়ামের পাথর, কাচের বোতল ও এক কেজির বেশি তারকাটা পাওয়া গেছে।

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ভালো পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে গান পাউডার সংগ্রহ এবং ককটেল বানাতে যাদের ব্যবহার করা হয় তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। জব্দ গান পাউডারগুলো চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এটি বানানোর জন্য বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা লোক সংগ্রহ করে। গ্রেপ্তার তিনজন এর আগেও একই ধরনের কাজে যুক্ত ছিল।

২৭ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জের জহুরপুর টেক সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ কেজি ৪৫০ গ্রাম গান পাউডার, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিনসহ মনিরুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করে বিজিবি। এ সময় মনিরুলের ছেলে খায়রুল নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। এর আগে ৪ অক্টোবর যশোরের বেনাপোলের দিঘিরপাড় থেকে ৪০০ গ্রাম গান পাউডারসহ শামীম হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×