ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

জেদ্দায় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও অন্যান্য সফরসঙ্গী সৌদি আরবের মক্কায় সোমবার মসজিদুল হারামে বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন -পিআইডি

শাহেদ চৌধুরী, মক্কা থেকে

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:৪৯ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০৯:০৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা ও দখলদারিত্ব অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

সৌদি আরব সফররত প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার জেদ্দার একটি হোটেলে ‘ইসলামে নারী’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে এ তাগিদ দেন। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি এবং সৌদি আরব সরকার এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বর্বরোচিত হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘গাজায় নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা জানাই। এটা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখের বেশি নারীর ওপর চালানো বর্বরতার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। এই নৃশংসতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডকেই মনে করিয়ে দেয়। এটা যেন ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত-নিপীড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশ অভিমুখে ছুটে আসার দৃশ্যপটকে ফিরিয়ে আনল। আমি অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ নিশ্চিত করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভয়াবহ যুদ্ধ, গোষ্ঠীগত শাস্তি ও অবৈধ দখলদারিত্ব এখনই থামাতে আমি বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি আমার ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের পক্ষে নিজের ভূমিকা রেখে যাব। শান্তির জন্য সব মুসলিম নারীকে সোচ্চার হতে হবে।’ 

মুসলিম নারীদের কল্যাণের জন্য এ সময় কিছু সুপারিশ ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রথমত, ফিলিস্তিনে সংঘাত অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের প্রতি অপরাধের বিচার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব ধরনের অপরাধ, সহিংসতা ও বৈষম্য এবং নারী ও মেয়েদের টার্গেট করে ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষকে ‘না’ বলতে হবে। তৃতীয়ত, এসডিজি-৫ অর্জনে লিঙ্গ সমতা এবং নারী ও মেয়ের ক্ষমতায়নে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। চতুর্থত, মুসলিম নারী ও মেয়েরা যেন জনপরিসরে নিজেদের পছন্দ বা ইচ্ছা অনুসারে চলতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পঞ্চম প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও মূলধারায় তাদের ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র তৈরিতে উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশ এ বিষয়ে বন্ধুপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এই বহুল প্রতীক্ষিত ইস্যুগুলোতে সংলাপ প্রত্যাশিত।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা উপলব্ধি করে খুব তাড়াতাড়ি ওআইসির নারী উন্নয়ন সংস্থায় (ডব্লিউডিও) যোগ দেয়। তিনি বলেন, ডব্লিউডিও যাত্রা শুরু করেছে এবং আমি আশা করি, ইসলামকে আরও ভালোভাবে বোঝার মাধ্যমে আজকের চাহিদাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ ম্যান্ডেটকে প্রসারিত করা যেতে পারে। আর তবেই আমরা একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বপ্ন দেখতে পারি। 

শেখ হাসিনা এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসলামে নারীর মর্যাদা তুলে ধরার জন্য সৌদি আরব ও ওআইসিকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নারীমুক্তির জন্য সৌদি আরবের যুগান্তকারী উদ্যোগগুলোকে আগ্রহের সঙ্গেই লক্ষ্য করি। ইসলামকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহ্বানে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন একজন নারী– বিবি খাদিজা।  তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর অধিকার ও লিঙ্গসমতা রক্ষায় তাদের গর্বিত ঐতিহ্য রয়েছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমমর্যাদা নিশ্চিত হয়েছে। নারীরা সব সময়ই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রথম সারিতে থেকেছেন। তিনি বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বৈশ্বিক সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটি অনন্য উদাহরণ আছে– যেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সরকারি দলের উপনেতা সবাই নারী। এ ছাড়া আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বস্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।

পবিত্র ওমরাহ পালন 

প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ওমরাহ পালন করেছেন। তিনি গতকাল সোমবার ভোরে পবিত্র মক্কায় তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং অন্যান্য সফরসঙ্গী নিয়ে মহান আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন। পরে তিনি মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করেন। এ সময় বাংলাদেশ এবং মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরাও পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী মসজিদুল হারামে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেন।

এর আগে মদিনায় হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারত এবং মসজিদে নববিতে আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এরপর বিমানে জেদ্দায় পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সড়কপথে জেদ্দা থেকে পবিত্র মক্কায় এসে পৌঁছেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার রাতে দেশের উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। বুধবার সকালে ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

আরও পড়ুন