ভোটের আগেই জোটে লড়াই
.
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৪৭
মহাজোটের শরিক দল হিসেবে বগুড়ার যে চারটি আসন জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়, এর মধ্যে অন্যতম বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি)। এবারের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর লম্বা লাইন লেগেছে। বগুড়ার অন্য আসনের চেয়ে এখানে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন সবচেয়ে বেশি।
বগুড়া-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মজিদ তালুকদার ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। মজিদ তালুকদারের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে আবদুল মোমেন তালুকদার খোকা ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি জিতে নেন। তবে আবদুল মোমেন তালুকদার যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলে তাঁর স্ত্রী মাছুদা মোমেনকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের টিকিট দেয় বিএনপি। তবে জাপার প্রার্থীর সামনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি তিনি। জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯২ ভোট পেয়ে এমপি হন। এর আগে বিএনপি আসনটি হাতছাড়া করে ২০১৪ সালে। বিএনপিহীন ওই ভোটে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন।
২০১৮ সালে লাঙ্গলের বিজয়ের জন্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি একাট্টা হয়ে ভোটের মাঠে নামলেও এবার চিত্র বদলে গেছে। আসনটিতে দলীয় এমপির বিরুদ্ধে খোদ জাতীয় পার্টির মধ্যেই বিরোধ চলছে। সঙ্গে আওয়ামী লীগের ডজনখানেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর দৌড়ঝাঁপ তো আছেই। পাঁচ দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বগুড়া-৩ আসনে নৌকার এমপি দেখতে চান দলটির নেতাকর্মীরা। কয়েক দফায় রাজনৈতিক সমীকরণ মেলাতে জোটের শরিকদের কাছে আসনটি ছেড়ে দিলেও এবার লড়তে চান স্থানীয় আওয়ামী নেতারা। এরই মধ্যে আসনটিতে গতকাল সোমবার পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী হতে ১০ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এর মধ্যে আছেন– আদমদীঘি আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খাঁন রাজু, আদমদীঘি আওয়ামী লীগের সদস্য ও সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি, জেলা আওয়ামী আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মতিন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম মন্টু, তবিবুর রহমান তবি, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ, দুপচাঁচিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম খান, আদমদীঘি আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অজয় সরকার ও দুপচাঁচিয়ার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবা নাসরিন রূপা। এ ছাড়া আরও কয়েকজন মনোনয়ন ফরম তুলবেন বলে জানা গেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছে। তাই এলাকার মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে অপেক্ষায় আছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে অন্যতম সিরাজুল ইসলাম খাঁন রাজু বলেন, আসনটি এক সময় বিএনপির ছিল, এর পর জাতীয় পার্টির। তৃণমূল আওয়ামী লীগের দাবি, অন্তত এবার আসনটি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য বরাদ্দ হোক। এতে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে, দল আরও এগিয়ে যাবে।
এদিকে, এবারও এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার লড়তে চান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। যদিও জোটের সমর্থন ছাড়া তাঁকে হেভিওয়েট মনে করছেন না বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীরা। আগে জাতীয় পার্টির মধ্যে বিরোধ না থাকলেও এবার বিভেদ প্রকাশ্যে। নুরুল ইসলাম তালুকদারের পাশাপাশি এবার লাঙ্গলের জন্য মাঠে নেমেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাপ্টেন (অব.) জাকারিয়া হোসেন। দু’জনই সমানতালে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির নেতা ওবায়দুর রহমান বলেন, এবার প্রার্থী বদল চাই। নুরুল ইসলামের পরিবর্তে জাকারিয়া হোসেন বা অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা একাট্টা হয়ে কাজ করব।
মনোনয়নপ্রত্যাশী জাকারিয়া হোসেন বলেন, নানা ক্ষোভ থেকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এবার প্রার্থী পরিবর্তন চান। আমি মঙ্গলবার দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলব।
সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিজ দল ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে নিয়েই কাজ করে আসছি। অনেকে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য বিরোধিতা করতে পারেন।