মনে হচ্ছে এখনও কারাগারেই আছি
মুক্তি পেয়ে খাদিজা বললেন

পরীক্ষার হলে খাদিজা
জবি প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৫৩ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬:৩৩
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান তিনি। পরীক্ষা শেষে খাদিজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মনে হচ্ছে এখনও কারাগারেই আছি। বাইরের পরিবেশের কোনো অনুভূতি বুঝতে পারছি না। আমি কোনোমতে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।’
জবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১১ ও ১৯ অক্টোবর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানা পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় ১৫ মাস কারাবন্দি থাকার পর গতকাল তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তবে দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে পারেননি খাদিজা। গতকাল চতুর্থ সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। এ কারণে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে সোজা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান।
দুপুরে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন খাদিজা। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি গণমাধ্যম সব সময় আমার সঙ্গে ছিল। আমি গণমাধ্যমের প্রতি ঋণী।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে খাদিজা বলেন, ‘কারাগারের দিনগুলোর কথা আমি কখনও ভুলব না। কিন্তু এখনই আমি কিছু বলতে চাই না।’
এর আগে সকালে কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় তো হয়েছেই। বিনা দোষে আমি প্রায় ১৫ মাস জেল খাটলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু আর এখন বলতে চাই না। বলার মতো মনমানসিকতা আমার নেই।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর বলেন, ‘খাদিজা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। আরও আগে জামিন পেলে তার সেমিস্টার লস হতো না। এখন একাডেমিক সবকিছুতেই সে অংশ নিতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘খাদিজা মুক্ত হয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। বাকি যে বিষয় আছে, সেটা আদালত দেখবেন। একাডেমিকভাবে কোনো সহযোগিতা লাগলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সেটা করবে।’
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর খাদিজাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান বড় বোন সিরাজুম মুনিরা। দীর্ঘদিন পর বোনকে কাছে পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত। পরীক্ষার পর খাদিজাকে নিয়ে তিনি মিরপুর-১০ নম্বরে নিজেদের বাসায় চলে যান। মা ফাতেমা বেগম সমকালকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর আমার মেয়েকে কাছে পেয়েছি। সে এতদিন জেলখানায় ছিল, এখন আমার কাছে থাকবে, আমার সঙ্গে ঘুমাবে। আমার মেয়ে আমার কাছে আছে– এখন এটাই শান্তি।’
জামিনের পরও মুক্তিতে বিলম্বের ব্যাখ্যা জানাতে নির্দেশ
সর্বোচ্চ আদালতের জামিন আদেশের পরও কেন কারাগার থেকে খাদিজার মুক্তি পেতে বিলম্ব হয়েছে– রাষ্ট্রপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গতকাল খাদিজার আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চে বিষয়টি নজরে আনলে এ নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে বৃহস্পতিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় জামিন আদেশ পান খাদিজা। গত রোববার তাঁর জামিনের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। খাদিজার মুক্তির জন্য রোববার সারাদিন তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারাগারের বাইরে অপেক্ষা করেন। কিন্তু রাত ১১টা পর্যন্ত মুক্তি না পাওয়ায় খাদিজাকে ছাড়াই তারা ফিরে যান।