
বান্দরবানের একটি বাগানে কফি গাছে ধরেছে ফল- লেখক
বর্তমানে কফি উন্নত পানীয় হিসেবে সারাবিশ্বেই ব্যাপক আদৃত। একসময় আমাদের দেশে কফির খুব একটা প্রচলন ছিল না। ধীরে ধীরে অনেকেরই পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তবে এই অভ্যস্ততাও পরনির্ভর। এখানে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ হয় না। অবশ্য সরকারের কৃষি বিভাগ অনেক আগেই জানিয়েছে, এখানকার আবহাওয়া কফি চাষের জন্য উপযুক্ত। বিশেষত বাংলাদেশের সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গ কফি চাষের জন্য উত্তম। তবে এ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। প্রায় দুই দশক আগে প্রথম কফি গাছ দেখি রমনা নার্সারিতে। কুন্দ ফুলের পাশে সুদৃশ্য ঝোপাল একটি গাছ। পরে অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণ, ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার ও বিচ্ছিন্নভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে দেখেছি। বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের 'বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে'র অধীনে কফি চাষে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য সারাদেশে উন্নত জাতের কফির চারা বিতরণ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ওই প্রকল্প থেকে প্রদর্শনী বাগান করারও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য অ্যারাবিকা জাতের কফি নির্বাচন করা হয়েছে।
সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩০০ থেকে ৬০০ মিটার উঁচু এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০০ থেকে ২০০০ মিলিমিটারে কফি ভালো জন্মে। আর তাপমাত্রা যদি ১৮ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তাহলে সোনায় সোহাগা। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কফি উৎপাদনকারী দেশগুলো হচ্ছে- ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও আইভরিকোস্ট। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভারতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কফি চাষ হয়। একটি পুরোনো হিসাব মতে, সারা পৃথিবীতে বছরে প্রায় ৪.৮ মিলিয়ন টন কফি উৎপাদন হয়। বর্তমানে নিশ্চয়ই উৎপাদনের পরিমাণ আরও বেড়েছে।
কফি গাছ চিরসবুজ। সাধারণত দুই থেকে তিন মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা উপবৃত্তাকার, গভীর শিরাযুক্ত, আগা তীক্ষষ্ট ও বিপ্রতীপভাবে বিন্যস্ত। পাতার কোলেই ফুল ফোটে এবং তাতে ১.৩ ভাগ ক্যাফেইন নামক উপক্ষার, কিছু পরিমাণ আমিষ ও শর্করা থাকে। সাধারণত চারা রোপণের তিন বছরের মধ্যে ড্রপ উৎপন্ন হয় এবং ত্রিশ বছর পর্যন্ত উৎপাদন শক্তি অব্যাহত থাকে। ফল পাকতে সময় লাগে ৮ থেকে ১২ মাস। পৃথিবীজুড়ে তিন জাতের কফি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। তন্মধ্যে Coffea arabica (অ্যারাবিয়ান কফি) জনপ্রিয়তা ও উৎপাদনের শীর্ষে রয়েছে। কারণ সারাবিশ্বের উৎপাদিত মোট কফির শতকরা ৭৪ ভাগই অ্যারাবিয়ান কফি, কঙ্গো কফি ২৪ ভাগ এবং বাদবাকি কফি লাইবেরিয়ান জাতের। অ্যারাবিয়ান জাত ছায়ায় ভালো জন্মে। কফি ক্ষেতের ছায়াবৃক্ষ হিসেবে বহুল পরিচিত উদ্ভিদের নাম গ্লিরিসিডিয়া ও ইনগা।
মন্তব্য করুন