বিডিবিও-সমকাল জীববিজ্ঞান উৎসব-২০২১ শুরু হচ্ছে। রোববার বিকেলে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাঙালির প্রতিভার কখনও অভাব ছিল না; বরং সীমিত সম্পদ নিয়েও কালে কালে প্রতিভাবান বাঙালি বিজ্ঞানীরা সম্মান বয়ে এনেছেন। আজকের তরুণ প্রজন্মও বিজ্ঞান গবেষণায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে- সেই আত্মবিশ্বাস রয়েছে। তাদের অনুসন্ধিৎসু মনকে কাজে লাগাতে হবে।

অনুষ্ঠানে সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, সমকাল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একটি বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি এই আয়োজনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রধান কোচ অধ্যাপক রাখহরি সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমকাল সুহৃদ সমাবেশের প্রধান সিরাজুল ইসলাম আবেদ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। বিডিবিও ওয়েবসাইটে গিয়ে এই রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। করোনাকালে এবারের উৎসবের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- 'কাটুক আঁধার আসুক আলো'। এ উৎসব থেকে নির্ধারিত চারজন প্রতিযোগী অংশ নেবে পর্তুগালে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের নিরন্তর এগিয়ে যাওয়ার প্রধান চালিকাশক্তি জিজ্ঞাসা। মানুষ সবার সেরা হওয়ার পরও সর্বোত্তম অবস্থান ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করে। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উদ্ভাবন এবং দুর্নিবার অগ্রযাত্রা মানবসভ্যতার। একটা জাতি তখনই অনেক বেশি এগিয়ে যায়, যখন সেই জাতি অনেক বেশি প্রশ্ন করার যোগ্যতা অর্জন করে। কারণ, প্রশ্ন থেকেই উদ্ভাবন, উদ্ভাবন থেকেই অগ্রগতি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় দিয়ে গেছেন, তার আলোকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, অবকাঠামো- সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয়ভাবে এগিয়ে গেছে গত ১২ বছরে। দেশের তরুণদের নিরবচ্ছিন্ন বিজ্ঞানচর্চা এই অর্জনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ধারাবাহিকভাবে অনেক কর্মসূচি নিয়েছে। বিডিবিও-সমকালের আয়োজনে সম্পৃক্ত কীভাবে হওয়া সম্ভব, তা জানানোরও পরামর্শ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি আরও বলেন, মানুষ জোটবদ্ধভাবে বাঁচতে অভ্যস্ত। হাতে হাত রেখে চলতে অভ্যস্ত। করোনাভাইরাস মানুষের সেই জোটবদ্ধ জীবনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ তার নিজের উদ্ভাবনের কারণেই এ অবস্থাতেও জোটবদ্ধ থাকছে। এই যে ওয়েবিনারে অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেটাও এক ধরনের জোটবদ্ধতা। এখানে সবাই সবাইকে দেখছে। আসলে মানুষ সব প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে যায় বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই।

তিনি বলেন, আমাদের তরুণরা সব সময়ই দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তরুণরাই জীবন দিয়েছে। আমাদের তরুণরা চাইলে দেশকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, সেই সক্ষমতা তাদের আছে। দরকার শুধু তাদের সক্ষমতা বিকাশের এবং প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি করা। জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজনও তরুণদের সেই সক্ষমতার সুযোগ সৃষ্টির জন্যই।

বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, সাত বছর ধরে এই জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হচ্ছে। এই আয়োজনের বয়স অল্প, কিন্তু অর্জন অনেক বেশি। কারণ, মাত্র সাতটি আয়োজনে অংশ নিয়েই বাংলাদেশের তরুণরা আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে পরপর দু'বার ব্রোঞ্জপদক জয় করেছে। অদূর ভবিষ্যতে তারা স্বর্ণ কিংবা রৌপ্যপদকও অর্জন করবে- সে প্রত্যয় তাদের আছে। তিনি বলেন, জীববিজ্ঞানের প্রতি একটা নিস্পৃহ ভাব আছে। সে কারণেই জীববিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করতে, এর গুরুত্ব বোঝাতেই এ আয়োজন। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানচর্চার প্রতিই তরুণদের বিপুল আগ্রহের সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু এ আয়োজন নয়, জীববিজ্ঞান বিষয়ে সহজ করে লিখে পুস্তক প্রকাশ করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজে ব্যবহারিক জীববিজ্ঞান চর্চাকেও উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি এই আয়োজনকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

অধ্যাপক রাখহরি সরকার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সাফল্যের কারণেই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সক্ষম হচ্ছে দেশের তরুণরা। শুধু অংশগ্রহণ নয়, সাফল্যও নিয়ে আসছে তারা। তিনি বলেন, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের জন্য তরুণদের প্রস্তুত করতে গিয়ে তার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এই তরুণরা জানার ব্যাপারে খুবই উৎসাহী, তারা সহজে বিষয়গুলো বুঝতে পারে এবং তাদের প্রখর চিন্তাশক্তি এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা আছে। এই তরুণরা ভবিষ্যতে আরও অনেক বড় সাফল্য নিয়ে আসবে বলে আশা করেন তিনি।