দেশের চলমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সংসদে নানা অভিযোগ তুলেছেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিরোধী দল বিএনপির দুই সদস্য। তাদের অভিযোগ, ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনীহা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।

সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বিএনপির হারুনুর রশীদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, 'নির্বাচনে ভোটের হার ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এই যে অনীহা এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়। স্বাধীনতার চেতনার সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ হচ্ছে নির্বাচন। আজ নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেন ওঠে? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারটা ভালো করে দেখা উচিত।'

তিনি আরও বলেন, 'সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের আরেকটি স্তম্ভ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের জন্য ভালো নয়, সরকারের জন্যও ভালো নয়। তিনি আরও বলেন, পাপুল একজন সংসদ সদস্য। কুয়েতে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। টাকা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে, কীভাবে গেল? আইন থাকলে হবে না, আইনের প্রয়োগ মানুষকে দেখতে হবে। না হলে অন্যায় বন্ধ হবে না।'

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি বলে মহাজোটের শরিক রাশেদ খান মেনন বলেছেন। এখন সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি মির্জা কাদের। তিনি বলেছেন, আজকে নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীর যারা এমপি আছেন, তাদের দু-তিনজন ছাড়া কেউ পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অনিয়মের নির্বাচনের মডেল। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না।'

তিনি আরও বলেন, 'স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার যাকে মনোনয়ন দিচ্ছে, তারাই নির্বাচিত হচ্ছে। নির্বাচন নামে বাংলাদেশে কোনো সংস্কৃতি নেই। নির্বাচনের নামে প্রহসন আর তামাশা হচ্ছে।'

হারুনুর রশীদ বলেন, 'যশোরের এক এমপির সঙ্গে ওসির কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। সরাসরি তিনি ওসিকে থানায় বোমা নিক্ষেপ করতে বলেছেন। মামলা দিতে বলেছেন। এগুলো আইনের শাসনের পরিপন্থি।'

ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, 'পাট ও চিনি শিল্প ধ্বংস হয়ে গেল। ৫৪ হাজার শ্রমিককে পেশা পরিবর্তন করতে বলা হলো। এটা যুক্তিযুক্ত হলো কি-না। সাধারণ মানুষের ওপর দোষ চাপিয়ে আমলারা সুখেই দিন কাটাচ্ছেন।'

এদিকে 'শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিল-২০২১' সংসদে পাস হয়েছে। সোমবার সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নিষ্পত্তি করা হয়।

বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপনের সময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনা করেন। বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নামে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি হতে যাচ্ছে সেটি সত্যিকার অর্থে কাজের বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে। নাম ও কাজের মিল থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নামে যে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েছে সেটির কোনো গ্রেডই নেই।' এ সময় তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতির ডিপো হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, 'নকল এন৯৫ মাস্ক যারা দিয়েছিল, সেই জেএমআই থেকে এবার টিকার সিরিঞ্জ নেওয়া হচ্ছে। কোম্পানিটি এত শক্তিশালী! শাহেদের হাসপাতালের জন্য কী করে চুক্তি করে, যে শাহেদ আদালত কর্তৃক প্রতারক ঘোষিত!'

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, 'স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি সংবাদে আসছে। সব দোষ আসে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমলাদের কিছু হয় না। তারা এত শক্তিশালী! অথচ দুর্নীতি হয় প্রকল্প পরিচালক পর্যায়ে। আজ পর্যন্ত একজন সচিব বা প্রকল্প পরিচালকের কিছু হয়নি।'